অবশেষে উন্মুক্ত হলো পাইকগাছার নাছিরপুর খাল

২০ গ্রামের মানুষের উচ্ছ্বাস
স্টাফ রিপোর্টার : প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ২০ টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষের ‘জীয়নকাঠি’ বলে খ্যাত জেলার পাইকগাছা উপজেলার তালতলা থেকে হরিঢালী পর্যন্ত বহুল আলোচিত নাছিরপুর খালটি অবশেষে উদ্ধার ও উন্মুক্ত করা হয়েছে। বুধবার উপজেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে খালটি উদ্ধার ও উন্মুক্ত করে। এলাকার নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষের উৎসবমুখর উপস্থিতিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি), সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিচালনায় খাল থেকে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হয়। প্রায় ২০৫ বিঘা জায়গার ওপর বিভিন্ন স্থানে টানিয়ে দেওয়া হয় সাইনবোর্ড। মানুষ তিন দশক পরে খালের ওপর তাদের পূর্ণ অধিকার ফিরে পেয়ে মাছ ধরার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।
এই খালটি উন্মুক্ত করার ফলে খালকে অবলম্বন করে যাদের অন্ন সংস্থান, খাল ঘিরে যাদের জীবন-জীবিকা তাদের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। মিষ্টি বিতরণ চলছে গ্রামে-পাড়ায়-বাড়ি-বাজারে। খালের দুই পাড়ে প্রাণ ফিরে পাওয়ার উচ্ছ্বাস চলছে। দৃশ্যত: তালতলা, চিনেমলা, গোয়ালবাথান, প্রতাপকাঠি, খোলা, কাজীমুছা, রেজাকপুর, কাশিমনগর, কানাইডাঙ্গা, কপিলমুনি, হরিঢালী, সলুয়া শ্রীরামপুর, হাউলি,নাছিরপুর, রামনগর, মাহমুদকাঠির মানুষের মাঝে বুধবার ছিল অন্যরকম দিন। প্রাণোচ্ছ্বাস-উৎসব-উল্লাসের দিন। তারা বহুকাল ধরে যে দাবি পূরণে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা নিপীড়িত ভয়-ভীতি বৈষম্যের দিন কাটিয়েছেন তা পূরণ হয়েছে।
গত সোমবার খুলনা জেলার ভূমি মন্ত্রণালয়ে জলমহাল ইজারা সংক্রান্ত কমিটির সর্বশেষ সভায় পাইকগাছা উপজেলার নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছিল।
নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন পাইকগাছা-কয়রা এলাকার জনহিতৈষী, এলাকা উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নে সংশপ্তক প্রতিজ্ঞ সুপরিচিত সাংবাদিক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন।
বহুকাল ধরে খাল সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকার লাখ লাখ সাধারণ জেলে, কৃষক, ঘের চাষী এবং সর্বসাধারণ অবরুদ্ধ ও অসহায় জীবনযাপন করে আসছিল। রাজনৈতিক দলীয় পরিচয়ে কতিপয় খালদস্যু দখলদার ভীতি ছড়িয়ে প্রতারণা ও জবরদস্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। এসব জলমহাল থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ যেমন ফসলের জন্য পানি দিতে পারে না, তেমনি প্রয়োজনীয় কাজেও এ পানি ব্যবহার করতে পারত না। যারা খালের পাশে মাছের ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের ঘেরের সর্বনাশ করে আসছিল এই খালদস্যুরা। খালদস্যুদের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বহু এলাকাবাসী। তারা স্থানে স্থানে বাঁশের পাটা, ঘন জালের বেষ্টনী নেটপাটা দিয়ে পানি প্রবাহ জব্দ করে খালটি প্রায় ভরাট করে ফেলেছে। গলা টিপে মারছে খালের প্রাণ- প্রাচুর্য । যে কারণে দীর্ঘকাল ধরে গ্রাম গ্রামান্তরের লাখ লাখ ভুক্তভোগী মানুষ নাছিরপুর খালটি উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিল। খাল ঘিরে রাজনৈতিক দলের দুই গ্রুপের দখল-পাল্টা দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় রণক্ষেত্রের দৃশ্যপট সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে সাধারণ মৎস্যজীবীদের মারধর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অতীতে অসংখ্যবার মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রেস কনফারেন্স করেও মেলেনি সমাধান। অবশেষে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খাল উদ্ধার ও উন্মুক্ত করার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার পর খাল পাড়ের সাধারণ জেলে, কৃষক এবং সাধারণ মানুষ তাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করে আনন্দ মিছিল করেছেন। মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইফতেখারুল ইসলাম শামীম, উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একরামুল হোসেন, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যদের নিয়ে নাছিরপর খাল অবৈধ দখল মুক্ত’র সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। খালের মধ্যে অবৈধ নেট পাটা অপসারণ কাজ শুরু করেন। খালের সাত স্থানে দেওয়া নেট পাটা পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ডাবলু দীর্ঘ দিন ধরে কখনো ইজারা নিয়ে, আবার কখনো ইজারাবিহীন অবৈধ দখলে রেখে খ- খ- করে নেটপাটা দিয়ে লবণ পানির চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছিলেন দখলদাররা। আওয়ামীলীগ শাসন আমলের শেষ দিকে দখল লুটপাটে ব্যস্ত ছিল আওয়ামী লীগের লোকজন । বঞ্চিত করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে।