খুলনা-যশোর সড়ক সংলগ্নে ‘জলাবদ্ধতা’

# মাঝারী-ভারী বর্ষণে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগসহ দূর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে #
# ড্রেন না থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা #
মো. আশিকুর রহমান : আষাঢ়ের বৃষ্টিপাত অব্যহত রয়েছে। খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্যনুসারে, গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ূ সক্রীয় থাকায় উপকূলীয় এলাকা তথা দক্ষিণাঞ্চলে মাঝারী হতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যহত রয়েছে, আবহাওয়ার এমনবস্থা আরো ৩/৪ দিন বিরাজ করতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ১ জুলাই (মঙ্গলবার) সকাল ৬ টা হতে ৫ জুলাই (শনিবার) সকাল পর্যন্ত খুলনায় মোট ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও গেল জুন মাসে খুলনায় খুলনায় মোট ২৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এমন বৃষ্টিপাত অব্যহত থাকায় নগরীর খুলনা-যশোর সড়ক সংলগ্নে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে, সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পড়ে সর্বমহল চলাচলে বেশ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। বিশেষ করে সড়কের উপর পানি ওঠে যাওয়ার কারনে সড়ক সংর্কীণ হয়ে পড়ার দরুন দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে। দুর্ভোগে পড়া ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, বর্ষাকালসহ নগরীতে মাঝারী হতে ভারী বৃষ্টিপাত হলেই খুলনা-যশোর সড়ক সংলগ্নে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিশেষ করে দৌলতপুর ফুটওভার ব্রীজের নীচে (নিউ চাইনিজ হ্যাভেন রেস্তুরেন্ট সম্মুখে, মুহসীন মোড় সংলগ্ন হোটেল ক্ষনিকার সম্মুখে, দৌলতপুর বাজার সংলগ্নের কিছু জায়গায়, দৌলতপুর বাস স্যান্ড সংলগ্ন পশ্চিমপার্শ্ব, দৌলতপুর ফুটওভার ব্রীজ সম্মুখ হতে নতুনরাস্তার পূর্বপার্শ্ব সমূহ, গোয়ালখালী স্ট্যান্ড সংলগ্নে, মুজগুন্নি নেছারীয়া মাদ্রাসার বিপরীত সড়ক সংলগ্ন, বয়রা মোড় সংলগ্ন, মানিকতলা তলা ও মাইলপোস্ট সড়ক সংলগ্নে, জোড়াগেট সংলগ্নসহ বিবিধ। এসব জায়গাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির দরুন সর্বমহল চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিপরীতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ খুলনার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যেহেতু বর্ষাকাল, বৃষ্টিপাত হবে এটা স্বাভাবিক। যে কারণে খুলনা-যশোর সড়কের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা শ্রমিকের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ম্যানুয়ারী পানি নিষ্কাশনের করা হচ্ছে, পাশাপাশি স্থায়ী সমাধানের জন্য সামনে কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহনও করবেন। এমতাবস্থায় ভুক্তভোগীরাসহ নগরীর নেতা ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ দ্রুত সময়ের মধ্যে সৃষ্ট এই জলাবদ্ধতা নিরসনে সড়ক ও জনপদ বিভাগ খুলনার সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
শনিবার (৫ জুলাই) নগরীর খুলনা-যশোর মহাসড়ক সংলগ্নে ঘুরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার দৃশ্য দেখার পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে বিভিন্ন দুর্ভোগের কথাও শোনা গেছে। এ বিষয়ে দৌলতপুরস্থ নিউ চাইনিজ হ্যাভেন রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী হামিম তালুকদার (বাবু) বলেন, একেই তো অপরিকল্পিতভাবে কোটি টাকা ব্যয় করে একটা ফুটওভার ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে, দৌলতপুর শহরের যানজট নিরসনে এই ফুট ওভারব্রীজ কোনো কাজে লাগছেনা। অপরিকল্পিত এই ফুট ব্রীজের কারণে আমাদের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে আছে। এখন আবার সামান্য বৃষ্টি-বাদল হলেই সামনে হাঁটুপানি জমা হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে আমরা ব্যবসায়ী চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। একই সাথে সৃষ্ট এই জলাবদ্ধতার কারণে পরিবহন ও পথচারীদেরও চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বর্তমান সময়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
পথচারী মিশু আনাম জানান, খুলনা-যশোর মহাসড়কের বেশ কিছু জায়গায় একটু বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে পরিবহন চলাচলে দূর্ঘটনার ঝুঁকি ও যানজট বাড়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে। এই সড়ক সংলগ্নে পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। জনসাধারনের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
এ ব্যাপারে ইজিবাইক চালক তরিকুল ইসলাম লাভলু জানান, এখন বর্ষাকাল চলছে। প্রতিদিনই বৃষ্টি হবে এটা স্বাভাবিক। খুলনা-যশোর মহাসড়কে কিছু জায়গায় সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে দৌলতপুর ফুট ওভার ব্রিজের নীচে, গোয়ালখালী, জোড়াগেটসহ কয়েকটি জায়গায় এই জলাবদ্ধতা গলারকাঁটা হয়ে দঁড়িয়েছে। ওই সকল স্থান দিয়ে একদিকে যেমন চলাচলে দূর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে দেখা দিচ্ছে যানজটও। কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থার না থাকায়, এই জলাবদ্ধতা । এছাড়া কিছু গতিরোধকের কারণে পানি নামতে পারে না, ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
প্রাইভেট চাকুরিজীবি সুমন বলেন, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত অব্যহত আছে। কর্মস্থলে মোটরসাইকলে যোগে রেইন কোর্ট পড়ে বের হচ্ছি। তবে খুলনা-যশোর মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতার কারণে চলাচলে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে গোয়ালখালী পার হলে সড়কের পাশে বিশাল জলাবদ্ধতা, মনে হয় যেন সাগর পাড় হচ্ছি। সড়কের উপর জলাবদ্ধতা সৃষ্টির দরুন সড়ক সংর্কীন হয়ে দূর্ঘটনার ঝুকি বেড়েছে।
এ বিষয়ে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা মহানগর সাঃ সম্পাদক এড.কুদরত-ই খুদা বলেন, খুলনা সিটির জনগন কোন ধরনের সেবা পাবে এটা দেখার দায়িত্ব প্রতিটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের। সমন্বয়হীনতার কারনে নগরবাসী দুর্ভোগ পোহাবে এটা কাম্য নয়। সুতারং, কেসিসি এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগকে সমান্বয় করে খুলনা-যশোর মহাসড়ক সংলগ্নের যে জায়গাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগনের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী-ক-অঞ্চল খুলনা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিগত সময়ে আমাদের ড্রেনেজ প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গা (নিউ মার্কেটের বিপরীত পর্যন্ত) সংলগ্নে ড্রেনের কাজ সম্পন্ন করি। ওই সময়ে তারা তাদের জায়গার উপর ড্রেনের নির্মান করতে সম্মত হলেও এখন সম্মত নয়। যেহেতু তাদের জায়গা, তারপরও জলাবদ্ধতা নিরসনে তারা আমাদের সহযোগীতা চাইলে আমরা অবশ্যই সহযোগীতা করবো।
এ বিষয়ে সড়ক উপ বিভাগ-১ খুলনার উপসহকারী প্রকৌশলী গোপাল কুমার সাহা জানান, এখন যেহেতু বর্ষাকাল, বৃষ্টিপাত হবে এটা স্বাভাবিক। যে কারণে খুলনা-যশোর সড়কের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা শ্রমিকের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ম্যানুয়ারী পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছি। স্থায়ী সমাধানের জন্য সামনে কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহন করবো।