প্লাস্টিক দূষণ: খাদ্যচক্র থেকে হৃদযন্ত্র পর্যন্ত ঝুঁকি

প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার আজ বিশে^র অন্যতম বড় পরিবেশগত সংকটের রূপ নিয়েছে। এক সময় শিল্প, কৃষি, চিকিৎসাসহ নানা ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ছিল সাশ্রয়ী ও টেকসই সমাধান। কিন্তু বর্তমানে এই কৃত্রিম পদার্থ পরিবেশ ও মানুষের জীবনের নানা স্তরে গভীর ক্ষতি সাধন করছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক এখন শুধু শহরের ড্রেন বা সাগরের পারেই নয়, মানুষের খাদ্যচক্রে, এমনকি রক্ত ও হৃদয়েও প্রবেশ করছে। সম্প্রতি রাজধানীর পরিবেশ ভবনে বিশ^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ শীর্ষক সেমিনারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে মিশে ভূ-পরিবেশ ও মাটি দূষিত করে উর্বরতা কমায়। প্লাস্টিক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, নদীতে জমে পানির চলাচল বাধাগ্রস্ত করে দূষণ বাড়ায়। ভেঙে যাওয়া প্লাস্টিকের মাইক্রো ও ন্যানো কণাগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ উল্লেখ করেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ড্রেন বন্ধ করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াচ্ছে। ডিএনসিসি প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় সবুজায়ন ও বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের সাবেক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা মোবারক আহমদ খান বলেন, ২০০২ সালে প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও কার্যকর হয়নি। পলিথিন বন্ধে সামাজিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নিতে হবে, পাশাপাশি বিকল্প পণ্য বাজারজাত করা জরুরি। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, জনসাধারণের মধ্যে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের বিকল্প পণ্য সহজলভ্য করতে হবে এবং আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে এমন একটি গুরুতর বিষয়। সরকার, জনসাধারণ ও শিল্প ক্ষেত্রের যৌথ উদ্যোগে প্লাস্টিক ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ ও বিকল্প প্রযুক্তি গ্রহণ অপরিহার্য। নয়তো খাদ্যচক্র ও মানবদেহে প্লাস্টিকের উপস্থিতি ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করবে, যা সবার সম্মিলিত সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।