জাতীয় সংবাদ

মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যা

# তোলপাড়, গ্রেপ্তার ৪
# যুবদলের ২ নেতা আজীবন বহিষ্কার #

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ রাজধানীর পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯) নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার ঘটনায় মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় যুবদলের ২ নেতাকে দল থেকে আজীবন বহিস্কার করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এজাহার নামীয় আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে(২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় তারেক রহমান রবিনের হেফাজত থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই ঘটনা সংঘটিত হয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উল্লেখিত, ঢাকার কেরানীগঞ্জে থাকতেন সোহাগ। তিনি একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরেকটি ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে মঙ্গলবার রাতের গুলি এবং গতকালের হত্যাকা- ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোহাগ হত্যায় জড়িতদের মধ্যে ছিলেন টিটু, মনির, অপু দাস, মঈন ও পলাশসহ তাদের সহযোগীরা। তবে নিহতের বন্ধু মামুন দাবি করেছে, দুই তিন মাস ধরে মঈন প্রতি মাসে চাঁদা দাবি করত সোহাগের কাছে। সোহাগ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুদিন আগে দোকানের সামনে এসে তাকে ‘দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় সোহাগকে একা পেয়ে মঈনসহ ৪-৫ জন মিলে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। নির্যাতনের সময় তারা তার পরনের পোশাকও খুলে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আমরা কেউ ভয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি। কারণ মঈন যুবদলের চকবাজার থানার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে মিটফোর্ড হাসপাতালের ফুটপাত ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এদিকে পাথর নিক্ষেপ করে প্রকাশ্যে সোহাগকে হত্যা করার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে অনেকেই এর নিন্দা জানিয়েছেন। অপরদিকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল এলাকায় ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী সোহাগ (৩৯) হত্যাকা-ের ঘটনায় যুবদলের দুই নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
তারা হলেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি। তাদের বিরুদ্ধে সোহাগের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়ার সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৯ জুলাই রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের মূল ফটকে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ী যুবককে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষে থেকে মামলা করা হয়। আসামিরা হলেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পদাক রজ্জব আলী পন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি। তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে আজীবন জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েন মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়-দায়ি ত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ে র নেতাকর্মীদের তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে যুবদল। এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আজীবনের জন্য বিএনপি বহিষ্কার করেছে জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button