চোখের চিকিৎসা নেই-দেখবে কে এই অন্ধকার?

চোখের সমস্যা কোনো সাধারণ রোগ নয়। অন্ধকার থেকে আলো দেখার মতো স্পর্শকাতর এই অঙ্গের যতেœ সামান্য গাফিলতিও হতে পারে স্থায়ী ক্ষতির কারণ। অথচ রাজবাড়ী জেলার চিত্র যেন পুরোপুরি তার বিপরীত। জেলার সদর হাসপাতালে পাঁচ মাস ধরে নেই কোনো চক্ষু চিকিৎসা। নেই কোনো চক্ষু চিকিৎসকও। জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নেই এ ধরনের কোনো বিশেষজ্ঞ। এমন চিত্র শুধু হতাশাজনক নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনকও বটে। দুইজন চক্ষু চিকিৎসকের একযোগে বদলির পর রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। আগে যেখানে মাসে গড়ে দুই শতাধিক রোগীর চোখের অপারেশন হতো, এখন সেখানে ঝুলছে তালা। জরুরি বিভাগের পাশে দাঁড়িয়ে টিকিট চেয়ে ফিরে যেতে হয় হতাশ রোগীদের। এ এক করুণ বাস্তবতা। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা এখন ছুটছেন বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়ে। এতে একদিকে বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপ, অন্যদিকে অদক্ষ চিকিৎসায় বাড়ছে জটিলতার ঝুঁকি। অনেকে হয়রানি বা অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়। রাজবাড়ীর মতো একটি জেলার জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক ভয়াবহ অব্যবস্থা। যেখানে সিভিল সার্জন নিজেই বলছেন, দ্রুত চিকিৎসক আসার সম্ভাবনাও নেই, সেখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে-এই চরম সংকট সমাধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো তৎপরতা আছে কি? এই সংকট শুধু চক্ষু চিকিৎসকের অনুপস্থিতিই নয়, বরং এটি দেশের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বল পরিকল্পনা, জনবল ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের বড় ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। দীর্ঘ সময় ধরে পদ শূন্য থাকা, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকা এবং জনদুর্ভোগকে গুরুত্ব না দেওয়াই এর মূল কারণ। রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী, এটি স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যর্থতা। আমরা যুক্তিসংগতভাবেই বলতে পারি-একটি জেলায় যদি সরকারি পর্যায়ে চক্ষু চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তবে তা কেবল প্রশাসনিক উদাসীনতার ফলেই সম্ভব। এখন সময় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। অবিলম্বে সদর ও উপজেলা পর্যায়ে চক্ষু চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। ততদিন বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক বা মোবাইল চক্ষু ইউনিট চালু করা যেতে পারে। জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই-এটি মৌলিক অধিকার। চোখের আলো যেন না নিভে যায়। রাজবাড়ীর জনগণ অন্ধকারে থাকুক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখনই সময় আলো ফেরানোর।