খুলনাঞ্চলে ১০০ কোটি টাকা ফসলের ক্ষতির সম্ভবনা
অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র মাঠের দন্ডায়মান ফসল, সম্প্রতি লঘুচাপের প্রভাবে অতিবৃষ্টি

# খুলনা অঞ্চলে রোপা আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলের সম্ভাব্য ক্ষতি ৯৯ কোটি ৯৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৩০ টাকা #
# ক্ষতিগ্রস্থ ফসলি জমির পরিমান ১,৯১৭ হেক্টর, ক্ষতির সম্মুখিন ৩০ হাজার ৭৫৮ জন কৃষক, বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বাগেরহাট জেলা #
# ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে বীজ প্রদান সহয়তাসহ প্রণোদনা প্রদানের আশ^াস সংশ্লিষ্টদের #
মো. আশিকুর রহমান : উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়াই গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি এবং মৌসুমি বায়ূ সক্রিয় থাকার উপকূলীয় এলাকা তথা দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টিপাত অব্যহত রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যনুসারে, গত ৫ জুলাই হতে ১০ জুলাই পর্যন্ত খুলনা জেলায় ২২৮ মিলিমিটার, বাগেরহাটে ৩৭৫ মিলিমিটার, সাতক্ষীরায় ১২৯ মিলিমিটার ও নড়াইল জেলায় ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে অতিবৃষ্টি জনিত কারণে খুলনাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলার সকল উপজেলায় অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র মাঠে দন্ডায়মান ফসলী জমির বিশেষ করে রোপা আমনের বীজতলা, আউশ ধান, শাকসবজি, বোনা আমন, মরিচ, তরমুজ, পান, গ্রীষ্মকালীন টমেটোসহ অন্যান্য ফসল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি জনিত কারণে খুলনাঞ্চলে ১ হাজার ৯১৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে, ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন ৩০ হাজার ৭৫৬ জন কৃষক। সংশ্লিষ্টরা রোপা আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির সম্ভবনা নির্নয় করা হয়েছেন ৯৯ কোটি ৯৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৩০ টাকা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পুনরায় পুর্নবাসনে রোপা আমনের বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ প্রদানসহ প্রণোদনা প্রদানের আশ^াস সংশ্লিষ্টদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনাঞ্চলের সর্বশেষ তথ্যনুসারে, সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে অতিবৃষ্টি জনিত কারণে খুলনাঞ্চলের অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র মাঠে দন্ডায়মান ১ হাজার ৯১৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে, ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ৩০ হাজার ৭৫৬ জন কৃষক। রোপা আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির সম্ভবনা নির্নয় করা ৯৯ কোটি ৯৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৩০ টাকার। যার মধ্যে, খুলনা জেলার ১১টি উপজেলায় রোপা আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ৪০৭ হেক্টর জমি, ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ৬ হাজার ১৫০ জন কৃষক, ক্ষতির সম্ভবনা নির্নয় করা ১১ কোটি ৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ১০ টাকার । বাগেরহাট জেলার ৯ টি উপজেলায় রোপা আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ১ হাজার ১২৪ হেক্টর জমি, ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ৯ হাজার ৩৩০ জন কৃষক, ক্ষতির সম্ভবনা নির্নয় করা ৮০ কোটি ৬৯ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার।
সাতক্ষীর জেলার ৭ টি উপজেলায় রোপা আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ৩৪৭ হেক্টর জমি, ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ১৩ হাজার ৬৬৮ জন কৃষক, ক্ষতির সম্ভবনা নির্নয় করা ৫ কোটি ৯৮ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকার ও নড়াইল জেলার ৩ টি উপজেলায় রোপা আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ৪২ হেক্টর জমি, ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ১ হাজার ৬১০ জন কৃষক, ক্ষতির সম্ভবনা নির্নয় করা ২ কোটি ১৬ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে অতিবৃষ্টি জনিত কারণে খুলনাঞ্চলের সকল উপজেলায় মাঠে দন্ডায়মান ফসলী জমি, বিশেষ করে রোপা আমানের বীজতলাসহ ফসলের যে ক্ষতি সাধন হয়েছে, পাশাপাশি কৃষকরা যে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন, ওই বিষয়টি সামনে রেখে প্রতিটি উপজেলা নিরলসভাবে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। আমনের বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ যথেষ্ট পরিমানে মজুত রয়েছে, অতিবৃষ্টির কবলে পরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের পুর্নবাসনে পুনরায় রোপা বীজ প্রদানের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষদের প্রণোদনা প্রদানের আশ^াস প্রদান করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়–রি ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. সেলিম মোড়ল জানান, বৃষ্টিতে আমার রোপা আমানের বীজতলা ডুবে গেছে। আমি ৪০ কেজি ধানের বীজ ফেলে ছিলাম। ওই বীজে প্রায় ১০ কাঠা জমিতে আমন ধান বপণ করা যেত। বৃষ্টি সব শেষ করে দিল। আমাদের ঘুরে দাড়াতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহয়তা কামনা করছি। এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা ব্লকের বকুলতলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. আসাদুল হাওলাদার বলেন, বীজতলায় ১০ কেজি বীজ ফেলে ছিলাম। সম্পূর্ন বীজতলা এখন পানির নীচে। এছাড়া অন্যান্য সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে। নতুন করে বীজতলায় বীজ বপণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস সরকার বলেন, রাড়–রি ইউনিয়ের কাটিপাড়া ও রাডুরি ব্লকে দায়িত্বপালন করি। আমার ব্লকে রোপা আমনের বীজতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দুই ব্লকে মোট ১৪ হেক্টর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ফসলের মধ্যে ৩ হেক্টর জমির মরিচ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে উপজেলা কৃষি অফিস হতে বীজ সহয়তাসহ যাবতীয় সহয়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল হাসান বলেন, সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা ব্লকে ব্লকে দায়িত্বপালন করি। আমার ব্লকে রোপা আমনের বীজতলার ৫ হেক্টর, আউশ ধান ২৫ হেক্টর ও অন্যান্য ফসল ৫ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের পুনরায় পুর্নবাসনের জন্য বীজ সহয়তাসহ যাবতীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. একরামুল হোসেন বলেন, সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে অতিবৃষ্টি জনিত কারণে পাইকগাছা উপজেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত রোপা আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৬৫ হেক্টর জমি। পাশাপাশি বিভিন্ন রকম সবজি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৮০ হেক্টর, ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমান ২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সম্পূর্ন ক্ষতি নির্নয় করতে গেলে আরো ২/১ দিন সময় লাগবে। আমনের বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ যথেষ্ট পরিমানে মজুত রয়েছে, অতিবৃষ্টির কবলে পরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের পুর্নবাসনে আমরা কাজ করছি।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ দেবব্রত সরকার বলেন, সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে অতিবৃষ্টি জনিত কারণে শরণখোলা উপজেলায় রোপা আমনের বীজতলার ক্ষতি ৩৫ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মাঠে দন্ডায়মান আউশ ধান, যার পরিমান ৮৯০ হেক্টর। এছাড়া অন্যান্য ফসল (সবজিসহ) ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৭৫ হেক্টর। ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ৬ হাজার ৪৫ জন কৃষক, ক্ষতির সম্ভবনা নির্নয় করা ৫৯ লক্ষ টাকার। আমনের বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ যথেষ্ট পরিমানে মজুত রয়েছে, অতিবৃষ্টির কবলে পরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের পুর্নবাসনে আমরা কাজ করছি।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে অতিবৃষ্টি জনিত কারণে খুলনাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলার সকল উপজেলায় অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র মাঠে দন্ডায়মান ফসল আউশ ধান, রোপা আমানের বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন ফসলসহ অন্যান্য ফসল ১ হাজার ৯১৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। জেলা সমূহের প্রাপ্ত তথ্যনুসারে ক্ষতির সম্ভবনা প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন ৩০৭৫৬ জন কৃষক। সার্বিক বিষয়টি সামনে রেখে প্রতিটি উপজেলা নিয়ে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। আমনের বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ যথেষ্ট পরিমানে মজুত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পুর্নবাসনে রোপা আমনের বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ প্রদানসহ প্রমোদনা প্রদানের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রণোদনার অনুরোধ জানানো হয়েছে।