হামলার প্রতিবাদে আজ সারাদেশে এনসিপির বিক্ষোভ কর্মসুচি ঘোষণা
খুলনায় এনসিপি’র সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম

আ.লীগ জঙ্গী সংগঠন, গোপালগঞ্জ ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় কেন্দ্র, অভিযুক্তদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে, জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে
স্টাফ রিপোর্টার : নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগ জঙ্গী সংগঠনে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ গোপালগঞ্জে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, এমন নাশকতা-সহিংসতা দেশের যে কোন জায়গায় যে কোন স্থানে যে কারো ওপর ঘটাতে পারে- আশঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশ্সানের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে নিরাপত্তা ক্লিয়ারন্সে নিয়েই তারা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছিলেন উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এরপরও যেভাবে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা হামলা চালিয়েছে, তা প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রমাণ দেয়। তিনি জানান, হামলা সত্ত্বেও তাদের পূর্ব নির্ধারিত পদযাত্রা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে পদযাত্রা ও পথ সভা হবে। বুধবার মাদারীপুর ও শরিয়ত পুরের কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও পরবর্তীতে সেখানে সমাবেশ হবে। হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপি বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন তিনি।
বুধবার রাতে খুলনা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এ দাবি জানান তিনি। এনসিপির মাসব্যাপি জুলাই পদযাত্রার ১৬ তম দিনে গোপালগঞ্জে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা ও তান্ডবের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এর আগে মাগরিবের কিছুপওে এনসিপির নেতারা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা কর্ডনের মধ্যে খুলনা সার্কিট হাউজে এসে পৌঁছান। তাদেও বহরে কয়েকশ’ কর্মীও ছিলেন। বহরের কিছু গাড়ি ভাংচুর অবস্থায় দেখা গেছে। যেখানে কয়েকজন আহত কর্মীও ছিলেন। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ৯টার কিছু পওে খুলনা প্রেসক্লাবে শুরু হয় কনফারেন্স। সেখানে সূচনা বক্তব্য রাখেন এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পটোয়ারী, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ। এছাড়া খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জ ফ্যাসিবাদের আশ্রয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সবাই এখানে এসে ঠাঁই নিয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ রাজনীতি করতে পারবেনা বলে বিশ^াস তৈরি করা হয়েছিল। আজ বাঁধা সত্ত্বেও সমাবেশ সফল কওে এনসিপি সেই মিথ ভেঙ্গে দিয়েছে। আজ তারা মুজিববাদী জঙ্গী চেহারা জনগনের সামনে উন্মোচন করেছে।
তিনি বলেন, আজ দফায় দফায় তারা হামলা করেছে। এনসিপির কর্মসূচি ছিল পূর্ব ঘোষিত। ফলে জঙ্গী সংগঠন আওয়ামীলীগও পরিকল্পনা করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার পৌছানোর পূর্বেই আমাদেও সমাবেশ মঞ্চ হামলার শিকার হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউএনও’র ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। প্রমাসন পরে যে তৎপরতা দেখিয়েছে তা শুরু থেকে দেখানো দরকার ছিল। এখানে কোন স্যাবোটাজ আছে কিনা তা তদন্ত করতে হবে। হামলার সাথে কারা জড়িত তা ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুঁজে বের কওে তদন্ত সাপেক্ষে তাদেও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সারা দেশের মানুষের কাছে জুলাই অভ্যূত্থানের বার্তা পৌঁছে দিতে এবং সেই এলাকার মানুষের কথা শুনতে পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়েছি। গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের বাইরের কোন জেলা নয়। সেখানে আশ্রয় নেওয়া মামলার সমস্ত আসামীদেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জেফ্যাসিস্টদের একটা আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সারাদেশের ছাত্রলীগের যাদের নামে মামলা রয়েছে তারা সেখানে অবস্থান করছে। তারা খুবই পরিকল্পিতভাবে এনসিপির নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যেই সশস্র এ হামলা চালিয়েছে। কিন্তু গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ প্রোগ্রাম করতে পারবে না- এই মিত এনসিপি সমাবেশ করে ভেঙ্গে দিয়েছে।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে আমাদের কর্মীদের পরিবারের ওপর হুমকি আছে। এই পরিকল্পিত হামলার জন্য দায়ীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তিনি সরকার এবং প্রশাসনের প্রতি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের আহবান জানিয়ে বলেন, তারা এখন জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা নাহলে গোপালগঞ্জর মানুষও নিরাপদ থাকবে না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ৩০ দিনে দেশের ৬৪ জেলায় যাবে। আগামীকাল ফরিদপুরের সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং আগের সময়সূচি অনুযায়ী পথসভা চলতে থাকবে। এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ কোনভাবেই ঠেকানো যাবে না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির উদ্যোগে পহেলা জুলাই থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে আমাদের যে মাসব্যাপী কর্মসূচি ছিল “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” সেই কর্মসূচিতে আমরা দেশের প্রত্যেকটি জেলায় যাচ্ছি এবং সেখানে গিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিশ্রুতি এবং সেই জেলার সেই এলাকার মানুষের সমস্যা শুনছি।
তিনি বলেন, সেই ধারাবাহিকতায় আজ গোপালগঞ্জ জেলায় আমাদের কর্মসূচি ছিল। আমাদের এই পদযাত্রার ঘোষণা অনেক আগে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা আমাদের গোপালগঞ্জের কর্মসূচিতে হামলা করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে তারা সেই কর্মসূচিতে জঙ্গি কায়দায় হামলা করে। গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষ করার পর আমরা যখন মাদারীপুর রওনা হুই, তখন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের গাড়িবহরে হামলা করে।
নাহিদ বলেন, গোপালগঞ্জের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় গুলিবর্ষণ করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের গাড়িবহরে হামলা করে এবং সেখানে যারা নিরাপত্তা বাহিনী ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনী তাদের উপরে হামলা চলায় এবং এক পর্যায়ে তাদের সহায়তায় আমরা সেখান থেকে খুলনায় চলে আসি এবং আমাদের আজকের যে পথসভা ছিল মাদারীপুর ও শরীয়তপুর সেটি স্থগিত করা হয়েছে। এনসিপির কর্মসুচিতে হামলার প্রতিবাদে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভকারী সংগঠনগুলোকে ধন্যবাদ জানান নাহিদ ইসলাম।
প্রেস বিফিংয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পটোয়ারী, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ। এছাড়া খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।