সম্পাদকীয়

নজরদারির সঙ্গে অভিযাান চালানো জরুরি

জটিল হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট

রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। টেকনাফের বাতাসে এখন অস্ত্রের ঝনঝনানি। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের পাশাপাশি ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা অপরাধ তৎপরতা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। খুনাখুনি লেগেই আছে। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্থানীয়রা এখন রোহিঙ্গাদের হাতে রীতিমতো জিম্মি। অন্যায়-অপরাধের শিকার হলে প্রতিবাদ করার ভাষাও তারা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে চলে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। জানা যায়, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা ছয় লাখ, আর রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। তার পরও প্রতিদিনই মায়ানমার থেকে আসছে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, গত ১৮ মাসে এসেছে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা। তথ্য মতে, ক্যাম্পগুলোতে প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে কম করে হলেও ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। সেই হিসাবে দৈনিক গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৮২টি শিশু। ফলে এই দুটি উপজেলায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলছে। শুধু রোহিঙ্গার সংখ্যা বৃদ্ধিই সমস্যার কারণ নেই। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রদত্ত আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতা ক্রমেই কমছে। এখানে তাদের কর্মসংস্থান বা আয়-উপার্জনেরও বিশেষ সুবিধা নেই। অর্থনৈতিক কারণেও তারা বাধ্য হয় নানা ধরনের অপরাধ তৎপরতায় জড়িয়ে যেতে। স্থানীয় অপরাধী চক্রগুলোও তাদের দলে ভেড়াচ্ছে। যোগ দিচ্ছে নানা ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠনেও। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানেও তাদের ব্যাপক সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর তারা শুধু কক্সবাজারেই নয়, এসব চক্রের মাধ্যমে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২৩ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, পাঁচ বছরে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হয়, তাদের একটি বড় অংশ নানা ধরনের অপরাধী চক্রের সঙ্গে ভিড়ে গেছে। উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী জানান, মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে অস্ত্র ও মাদকের চোরাচালান কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তিনি জানান, অস্ত্র ও মাদক প্রথমে ক্যাম্পগুলোতে মজুদ করা হয়, পরে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানান, এলাকাবাসীর প্রতিটি দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কাছে একরকম জিম্মিদশার মধ্যে আছে উখিয়ার মানুষ। তাদের ভয়ে সারাক্ষণ স্থানীয়দের তটস্থ থাকতে হয়। স্থানীয়দের রাত কাটে রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের ঝনঝনানির মধ্যে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরগুলোতে কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চোরাচালান বন্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button