স্থানীয় সংবাদ

অতিবৃষ্টির প্রভাব খুলনার সবজি বাজারে

# ব্যবসায়ীরা বলছেন : অতিবৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষেতের ফসল নষ্টের দরুন সবজি দাম কিছুটা বাড়তি #
# একাধীক ক্রেতাদের মন্তব্য : বর্তমানে সবজি স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে #
# নিয়মিত বাজার দর মনিটরিং জোরালো দাবি #

মো. আশিকুর রহমান ঃ সম্প্রতি সমুদ্রে সৃষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি দরুন দক্ষিণাঞ্চল তথা খুলনাসহ পাশর্^বর্তী অঞ্চলগুলোতে অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষেতের সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অতিবৃষ্টির এই প্রভাব পড়েছে খুলনার সবজি বাজারে। কয়েকদিনের ব্যবধানে বাজারে দৃশ্যমান সবজির দাম হাতের নাগালে না থাকায় নাভিশ^াসে নি¤œ আয়ের মানুষ। বাজারে সবজি কিনতে গিয়ে তারা হাঁফিয়ে উঠছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতি বৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতের সবজি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার দরুন বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেকটা কমেছে, যে কারণে বাজারে সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। আমরা কোনো সবজির দাম বাড়তি দামে বিক্রি করি না। যে দামে কিনি তা হতে সামান্য লাভে বিক্রি করে থাকি। অনেক ব্যবসায়ী আশংঙ্কা করছেন, কয়েকদিন আগে যেভাবে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে, এমন লাগাতার বৃষ্টিপাত যদি অব্যহত থাকে, তবে সামনে সবজির দাম আরো বাড়বে বলে ধারণা করছেন তারা। বিপরীতে বাজারে আসা ক্রেতা বলছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি নামলে, অতিরিক্ত খড়া পড়লে অর্থ্যাৎ প্রাকৃতিক কোনো দুর্ভোগ দেখা দিলেই বাজারে সবজির দাম আকাশ ছোয়া হয়ে পড়ে। ওই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বাড়তি দামে সবজি বিক্রি করে তাদের পকেট ভারী করছেন। এমতাবস্থায়, একাধীক ক্রেতারা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ নিয়মিত বাজার দর মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদারে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) নগরীর বিভিন্ন খুচরা সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকা, বরবটি ৮০-৯০ টাকা, উচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, ঢেড়শ ৫৫-৬০ টাকা, পাতাকপি ৭৫-৮০ টাকা, কাকরোল ৬০-৭০ টাকা, কুশি ৫০-৬০ টাকা, কচুরলতি ৫০-৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকা, টমেটো দেশি কত দেশে ১৩০-১৪০টাকা কোল্ডস্টোরেজ টমেটো ১৮০-২০০ টা কা , পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩৫-৪০ টাকা, কচুরমুখি ৫৫-৬০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙ্গে ৬০-৭০ টাকা, লালশাক ৫০-৬০ টাকা, পুঁইশাক ৩৫-৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকা, কাঁচকলা হালি ৩০-৪০, কাঁচা মরিচ মধুখালী প্রতি কেজি ১২০-১৬০ টাকা, কাঁচা ঝাল বরজ প্রতিকেজি ২০০-২৪০ টাকা, ওল কচু ৮০-৯০ টাকা, শশা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, খিরাই প্রতিকেজি ১০০ টাকা প্রতিকেজি, আলু প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে আকাশচুম্বি দাম বিরাজ করছে কাঁচা মরিচে। ইতোমধ্যে কাঁচা মরিচে ডবল সেঞ্চুরী। সবজি কিনতে আসা ক্রেতা স্বপ্না রানী মন্ডল জানান, গেল বৃষ্টির কয়েক দিন আগে সবজির বাজারে এসে ছিলাম। সেই সময় সবজির দাম কিছুটা হাতের নাগালে ছিল। গতকাল সবজি কিনতে এসে মাথায় হাত। বেগুনের কেজি ১০০ টাকা। যে বেগুন কয়েকদিন আগেও ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি সবজির দাম বাড়তি। অতিবৃষ্টির কারণে সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু ওই অজুহাতে যে দাম নেওয়া হচ্ছে অনেক বাড়তি। বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানাচ্ছি। ক্রেতা নাসরিন আক্তার জানান, সবজির বাজারে ঢুকে আমি অবাক। বৃষ্টি বাদলে কৃষকের সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু সবজি বাজারের যে অবস্থা সাধারন মানুষ, বিশেষ করে দিন মজুর শ্রেনীর মানুষ চরম বিপাকে পড়বে। বর্তমানে বাজারে সবজির যে দাম , তা সল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। অপর ক্রেতা সোহেল রানা জানান, একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করি। কয় টাকায়বা বেতন পায়। এমনিই সংসার চালাতে হিমশিম খায়, তারপর আবার বর্তমানে সবজির বাজার চড়া। আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়লে, অতিরিক্ত খড়া পড়লে অর্থ্যাৎ প্রাকৃতিক কোনো দুর্ভোগ দেখা দিলেই বাজারে সবজির দাম আকাশ ছোয়া হয়ে পড়ে। ওই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বাড়তি দামে সবজি বিক্রি করে তাদের পকেট ভারী করছেন। নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানাচ্ছি সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
খুচরা সবজি বিক্রেতা মিঠু জানান, কৃষক থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে সবজির বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অতি বৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতের সবজি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার প্রভাব পড়ছে সবজি বাজারে। তাছাড়া বৃষ্টি বাদলের কারণে ক্ষেতের ফসল তুলতে নানামুখি বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছেন কৃষকেরা। আমরা কোনো সবজির দাম বাড়তি নিচ্ছি না, যা দামে কেনেছি, তা হতে সামান্য লাভে বিক্রি করছি।
অপর সবজি বিক্রেতা রব জানান, কয়েকদিন আগের ভারী অতি বৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতের সবজি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুবে গেছে ক্ষেতের ফসল। যে কারণে চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমেছে। কয়েকদিন আগে যেভাবে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে, এমন লাগাতার বৃষ্টিপাত যদি সামনে অব্যহত থাকে, তবে সবজির দাম আরো বাড়তে পারে। দৌলতপুর বাজার বণিক সমিতির সহ-সাঃ সম্পাদক ও দৌলতপুর বাজার খুচরা কাচাঁমাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ পলাশ হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগের অতি বৃষ্টির কারণে খুলনাসহ পাশর্^বর্তী অঞ্চলগুলোতে অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতের সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ডুবে গেছে ক্ষেতের ফসল। নতুন করে কৃষকরে উৎপাদিত সবজি বাজারে আসা শুরু করলে, সবজির দাম কমে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button