স্থানীয় সংবাদ

গল্লামারী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ অবৈধ স্থাপনার কারনে ব্যাহত হচ্ছে

# ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্ছেদ কমিটি গঠন #
# ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ইয়ার্ডে সেতুর কাজ চলমান #
# সেতুর কাজের শতকরা ৫০ ভাগ সম্পন্ন#

এম আমিন রুহুল: খুলনা- সাতক্ষীরা জাতীয় মহাসড়কের ময়ূর নদীর উপর ২ লেন বিশিষ্ট স্টিল আর্চ টাইপে গল্লামারী সেতু নির্মাণে অবৈধ স্থাপনার কারনে প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ হবে। ৬৮ দশমিক ৭ মিটার লম্বা ও ২৩ মিটার প্রশস্ত সেতু দুটির মূল অবকাঠামো হবে স্টিলের। দেখতে অনেকটা রাজধানীর হাতির ঝিলের আদলে নির্মাণাধীন সেতু দুটি নদী থেকে ৪ মিটার উচু হবে। সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা যায়,সেতুটি নির্মাণে চায়না ও ইন্ডিয়া থেকে মালামাল আমদানি করতে হয়েছে। যার কারনে অনেক সময় লেগেছে। ব্রিজে যে রং ব্যবহার করা হবে তার স্থায়ীত্ব থাকবে ২০ বছর। এই রং টি ইন্ডিয়া থেকে আমদানি করতে সময় লেগেছে চল্লিশ দিন। প্রকল্পের ইয়ার্ডে কাজ চলছে ধনুকের স্টিল এক্সট্রাকচার তৈরি করতে হবে। এ পর্যন্ত ১ম সেতুর কাজের শতকরা ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ব্রিজের দুই পাশে দুইটি ওয়ার্কিং সেট তৈরি করতে বেশ জমির প্রয়োজন। যেখানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ক্রেনসহ মালামাল রেখে সেতুর অংশ বিশেষ প্রস্তুত করবে। খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রধান করে ইতিমধ্যে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্ছেদ কমিটি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গাটি সড়ক জনপথের সার্ভেয়ার লাল চিহ্ন দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করেছে। যারা অবৈধ দখলদার রয়েছে তাদের কে ইতিমধ্যে নোটিশ দেয়া হয়েছে। মাইকিং করে তাদের কে স্বইচ্ছায় সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হবে। তারা সরে না গেলে খুলনা সড়ক বিভাগ নিজস্ব ব্যবস্থায় প্রশাসন নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান করবে। প্রকল্প এলাকায় ওয়াকিং সেট নির্মাণের জায়গা পর্যাপ্ত না থাকার কারণে ব্রিজের কাজটি দ্রুত শুরু করতে পারছে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদার প্রতিষ্টান এনডিই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অপুর্ব কুমার বিশ^াস বলেন, মোট ৬৪টি পাইলের মধ্যে ৩২টি আর চারটি পাইল ক্যাপের মধ্যে দুইটির কাজ শেষ হয়েছে। ৩২টি পাইলে ৪০ মিটারে ভালো মাটি না পাওয়া প্রতিটি পাইলে ৮ মিটার বাড়তি করা হয়েছে। আর এই ৮ মিটার বাড়ানোর অনুমতি নিতে ছয় মাস সময় লেগেছে। নকশায় কিছু কিছু ত্রুটি ছিল সেটি করতেও বেশ সময় চলে গেছে। এবং আমাদের সেতুর মালামাল বেশিরভাগই দেশের বাহির থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। ৬৪ টি পাইলে প্রতিটি পাইলে ৮ মিটার করে বেশি বোরিং করতে হচ্ছে তাতে আমাদের টাকা বেশি খরচ হয়েছে সেটি আমরা দাবি করেছি। ৫আগস্ট এর পরে পরিস্থিতির কারণে কিছুটা সময় চলে গেছে। সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় কাজ করতে পারিনি। তবে আমাদের কাজ বন্ধ নেই কুমিল্লায় প্রকল্পের ইয়ার্ডে সেতুর কাজ চলমান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, সেতুর নকশাসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরির্তন আনা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করবে। কাজ শেষে সব কিছুর পরিমাপ করে বাড়তি কাজের বিল সমন্বয় করা হবে। অবশ্য তারা প্রস্তাবে রাজি হয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকায় কাজ বন্ধ থাকলেও ঠিকাদারের ইয়ার্ডে সেতুর স্টিল কাঠামোর কাজ চলছে। তবে আগস্টের প্রথম দিকে সেতু দৃশ্যমান দেখা যাবে। প্রকল্প এলাকায় ওয়াকিং সেট নির্মাণের জায়গা নিয়ে সামান্য জটিলতা রয়েছে।তবে ভূমি উদ্ধারে শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান করা হবে।খুব দ্রুত সেতুর কাজ শেষ হবে।
গল্লামারি সেতু এলাকার যারা অবৈধভাবে সড়ক ও জনপথের জায়গায় ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি জায়গা যখন প্রয়োজন হবে আমরা ছেড়ে দিব। তবে কেউ কেউ বলেন সেতুটি যখন নির্মাণ হবে তখন বর্তমান সেতুর নিচে যে দোকানপাটগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবসা করতে কাস্টমারদের যাতায়াতে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হবে। তাই ভবিষ্যতে বাজারটি কতটা চলমান থাকবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে সচেতন মহল মনে করেন গল্লামারি ব্রিজের নিচে এখানে কোন বাজার তেমন প্রয়োজন হবে না।
উল্লেখ্য,সেতু নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংকে (এনডিই) কার্যাদেশ দেয় সড়ক বিভাগ। চুক্তির আওতায় স্টিলের দুটি সেতু এবং সেতুতে যানবাহন ও পথচারীদের ওঠানামার জন্য দুই পাশে প্রায় ৭৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর পুরাতন সেতুটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করে ঠিকাদার। ওই বছরই নতুন সেতুর কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০২৪’র আগস্টের পর থেকে দৃশ্যমান সব কাজ থমকে গেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ কাজ ১৮ মাসে অর্থাৎ চলতি বছরের ৩০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আবেদনে ইতিমধ্যে কাজের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি হলেও নিদিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণ কাজ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button