মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সড়ক থেকে উঠিয়ে নেয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে

দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির নৈরাজ্য চলছে। এসব যানবাহন প্রায় প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। অসংখ্য কর্মজীবী মানুষ নিহত এবং চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। তাদের পরিবারগুলো উপার্জনক্ষমদের হারিয়ে নিঃস্ব ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের সংখ্যা ৭৫ হাজার। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সড়কগুলোকে ধাপে ধাপে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনশূন্য করে ফেলার কার্যক্রম চলছে। অবশ্য গত বছরের অক্টোবরেই বলা হয়েছিল, এ বছরের মে মাস থেকে সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের পরও দুই মাস পেরিয়ে গেছে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় মার্কা যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো সরকারই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে জব্দ ও ডাম্পিং করার অনেক কথা বলা হয়েছে, যা শেষয় পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি। এর অন্যতম কারণ, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনের বিরোধিতা। যখনই এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান শুরু করতে যায়, তখনই তারা বেঁকে বসে। ধর্মঘট করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বেশ কয়েকবার মেয়াদোত্তীর্ণ বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য গাড়ির বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বারবারই তা পিছিয়ে যায়। এবার নতুন করে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা একটা ভালো খবর। রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে হাজার হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বহু বছর ধরেই চলছে। প্রত্যেক শহর চলমান জঞ্জাল শহরে পরিণত হয়েছে। এসব যানবাহন যেমন পরিবেশ দূষণ করছে, তেমনি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। রাজধানীতে এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা ও মেয়াদোর্ত্তীণ লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের দৌরাত্ব্য চলছে। এগুলো প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তারা নিয়মকানুনের ধার ধারে না। তাদের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও কোনো পদক্ষেপ নেই। সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮-এর ধারা ৩৬ অনুযায়ী, বাস ও মিনিবাসের জন্য ইকোনমিক লাইফ ৪০ বছর এবং ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য মালবাহী মোটরযানের জন্য ২৫ বছর নির্ধারণ করা আছে। এ মেয়াদ শেষ হলেই এসব যানের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ব্যাপারে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ইতিবাচক। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া দরকার। মেয়াদোত্তীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন কীভাবে সড়ক থেকে তুলে দেয়া যায়, অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ব্য কমানো যায়, এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ছোট ছোট যাত্রীবাহী পরিবহন কমিয়ে কীভাবে গণপরিবহন বাড়ানো যায়, এ পরিকল্পনা করতে হবে। বিআরটিসিসহ পরিবহন মালিকদেরও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।