সম্পাদকীয়

আত্মহত্যার ভয়াবহ চিত্র: ঝিনাইদহের বার্তা সমগ্র জাতির জন্য সতর্ক সংকেত

এক বছরে ৩৬১ জনের আত্মহত্যা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি শান্তিপূর্ণ জেলা ঝিনাইদহ, সম্প্রতি এক ভয়াবহ বাস্তবতায় জাতির সামনে এসেছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় গত এক বছরে ৩৬১ জন মানুষের আত্মহত্যার ঘটনাটি শুধুই পরিসংখ্যান নয়-এটি একটি সামাজিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি। বিশেষ করে নারী আত্মহত্যার হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি হওয়ায় বিষয়টি আরও গভীর মনোযোগ দাবি করে। জেলার সদর উপজেলা আত্মহত্যার হারে শীর্ষে, যা জনবসতির ঘনত্ব ও পারিবারিক জটিলতার সম্ভাব্য সম্পর্ককে ইঙ্গিত করে। আত্মহননের কারণ হিসেবে প্রধানত পারিবারিক কলহ, দাম্পত্য দ্বন্দ্ব এবং চরম অর্থনৈতিক অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ৬২ শতাংশ আত্মহত্যাকারী হতাশাজনিত কারণে এই পথ বেছে নিয়েছেন, যা মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিপন্ন দশা ফুটিয়ে তোলে। এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে গত বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায়, যেখানে সরকারি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, সামাজিক সংগঠন ও এনজিও প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আওয়ালের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই কর্মশালায় বক্তারা একমত হন যে, আত্মহত্যা এখন আর ব্যক্তি সমস্যা নয়; এটি একটি সামষ্টিক সংকট। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা এখন কী করব? আত্মহত্যা প্রতিরোধে শুধু মেডিকেল হস্তক্ষেপ নয়, প্রয়োজন পারিবারিক সহানুভূতি, সামাজিক সংহতি এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতা। স্কুল-কলেজে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে কাজ করার সময় এখনই। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা আজও আমাদের সমাজে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে ধরা হয়। অথচ প্রতিটি আত্মহত্যা একটি পরিবার ধ্বংস করে দেয়, সমাজে সৃষ্টি করে ভয়াবহ ক্ষরণ। এই পরিস্থিতি শুধু ঝিনাইদহ নয়-সমগ্র দেশের জন্য এক ভয়াবহ বার্তা। এই বাস্তবতায় এখন সময় এসেছে আত্মহত্যা বিষয়টিকে “ট্যাবু” নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করার। শুধু প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবস্থা নয়, চাই প্রতিরোধক ব্যবস্থাও-তবে তা আন্তরিকতার সঙ্গে, কর্মপরিকল্পনা নিয়ে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button