সারা শহর খোঁড়াখুঁড়িতে দিশেহারা নগরবাসী

# কেসিসির ২টি, কেডিএ’র ৩টি, ওয়াসার ১টি ও সওজ’র ২টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান #
# নাগারিক নেতারা বলছেন : অপরিকল্পিত উদ্যোগে দুর্ভোগে নগরবাসী, অপচয় হচ্ছে সময় ও অর্থ #
# দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের আশ^াস সংশ্লিষ্টদের #
মো. আশিকুর রহমান: খুলনাকে আধুনিক নগরীর রূপ দিতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, সড়ক ও জনপদ বিভাগসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো শহরে সারা বছর উন্নয়নের কার্যক্রম চলমান রেখেছে। তবে সারা শহরে সংশ্লিষ্টদের এই উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ অনেকাংশে নগরবাসীর গলারকাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বছর ধরে সমগ্র শহরের অধিকাংশ স্থানে খোঁড়াখুঁড়িতে দিশেহারা নগরবাসী। খুলনার গুরুত্বপূর্ন সড়কসহ স্থানীয় এলাকাগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সড়ক নির্মাণ বা সংস্কার, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিবিধ উন্নয়ন কার্যক্রমের খোঁড়াখুঁড়ি কার্যক্রম বলতে গেলে সারা বছরই ধরে চলে। চলমান এই উন্নয়ন কার্যক্রম খুলনার উন্নয়নের অবদান রাখলেও সারা বছর শহর জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি যেন নগরবাসীর পিছু ছাড়ছেনা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই ভয়াবহতা আরো বাড়ছে। নগরবাসী ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্প মানুষের স্বস্তির জন্য, ভোগান্তির জন্য নয়। কিন্তু খুলনা মহানগরীতে দীর্ঘ সময় ধরে উন্নয়ন প্রকল্পের যে কাজ চলামান রয়েছে তা নগরবাসীর স্বস্তির বিপরীতে দুর্ভোগ বহুগুণে বাড়াচ্ছে। এতে শহরে স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে, বিশেষ করে বর্ষায়। নাগরিক নেতা বলছেন, অপরিকল্পিত উদ্যোগ ও সমন্বয়হীনতার কারণেই সমগ্র শহরে বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ণে দীর্ঘসূত্রিতা ও সমন্বয়হীনতা ও দায়বদ্ধহীনতার কারণে সময় এবং অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে। নগরবাসীর স্বস্তি ফেরাতে শহরের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক নেতৃবৃন্দসহ ভোগান্তির শিকার নগরবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নগরীতে ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩ প্রকল্প বাস্তবায়ণ করছে। যার মধ্যে সরকারী অর্থায়ণে ২টি ও নিজস্ব অর্থায়ণে ১টি প্রকল্প বাস্তবায়ণ হচ্ছে। এর মধ্যে, ২৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পটি গত ২০১৩ সালে অনুমোদন পেলেও জমি বুঝে পেতে বিলম্ব হওয়ায় কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। বর্তমানে কাজটির কার্পেটিং লেয়ার, বেজ লেয়ার ও ব্রীজের সুপার স্ট্রাকচারের আংশিক কাজ চলমান রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে কাজটি সম্পন্ন হবে, বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৭৫%। ৭১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে থ্রী-লিংক সড়ক নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় গত ২০১৮ সালের শেষের দিকে, শেষ হওয়ার কথা রয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে। থ্রী-লিংক সড়কের ৩টি অংশ যথাক্রমে- আড়ংঘাটা থানাধীন গাইকুড় থেকে বাস্তহারা লিংক রোড পর্যন্ত, আরেকটি অংশ নগরীর রায়ের মহল হতে গল্লামারী পর্যন্ত এবং শেষ অংশটি নগরীর নিরালা মোড় থেকে সিটি বাইপাস পর্যন্ত কাজ চলমান রয়েছে, তিন সড়কের অগ্রগতির গড় ৬০%। এছাড়া, ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কেডিএ বিপণী বিতান (৫ তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন) এর বেজমেন্টের কাজ চলমান রয়েছে, কাজের অগ্রগতির হার ৩৫%। প্রকল্পটি শুরু হয় গত ২০২১ সালের শেষে দিকে এবং আশা করা যাচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে কাজটি সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে কেডিএ’র চলমান প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা। খুলনা সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে মহানগরী এলাকায় ৩টি প্রকল্পের কাজ চলমান রখেছে। ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। গত ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ওই প্রকল্পের মেয়াদ আরো ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে খুলনা খানজাহান আলী সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়কে কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ৪০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য ব্যবস্থপনার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রেখেছে কেসিসি। প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে, কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের জানুয়ারী মাস হতে। কাজের অগ্রগতি ৭০%। প্রকল্পে জমি অধিগ্রহন, রেডিমিক্স প্লান্ট, যানবাহন/যন্ত্রপাতি ক্রয়, ১২ টি এসটিএস ’র মধ্যে ৫টি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে। খুলনা ওয়াসা ২ হাজার ৩’শ ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ১৭-৩১ নং ওয়ার্ডে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রেখেছে, কাজের অগ্রগতি ৬৫%। প্রকল্পটি গত, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুমোদন পেলেও ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতা, করোনা সংক্রমনসহ বিবিধ বিষয়ের জটিলতার পর মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয় গত, ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে চলমান কাজ শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খুলনা মহানগরীর ভৈরব নদীর উপর (দৌলতপুর-দিঘলিয়া এলাকায়) ৩০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব সেতু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া গল্লামারী এলাকায় খুলনা সড়ক বিভাগ গল্লামারি ব্রীজের কাজ চলমান রেখেছে। ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ব্রীজের কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজটি গত, ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে অনুমোদন পেয়ে টেন্ডার, ঠিকাদার নিয়োগ শেষে কাজ শুরু হয়েছে অক্টোবর মাস হতে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২০২৬ সালের জুন মাসে ব্রীজের চলমান কাজ শেষ হবে। এছাড়া নগরীর বৈকালি স্টেডিয়াম সম্মুখে সূয়ায়েজ ড্রেনের (ক্রস ড্রেন)’র কাজও শেষের দিকে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত কয়েকদিন, নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন সড়ক ঘুরে ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলে খুলনায় চলমান উন্নয়নের কর্মকা-ের ব্যাপারে ব্যাপক নেতিবাচক মন্তব্য ও চলাচলে চরম দুর্ভোগের বিষয়ে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া শোনা যাচ্ছে। খুলনায় চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের ব্যাপারে তাদের নেতিবাচক মন্তব্য গুলোর মধ্যে রয়েছে কেডিএ’র শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের বিষয়ে। সারা বছর জুড়ে ওই সড়কটিতে খোঁড়াখুঁড়িতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই এলাকার সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে বর্ষাকালে এই দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ওই সড়কটি মানুষের স্বস্তির কারণ না হয়ে এখন গলায় কাটায় পরিনত হয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। কেসিসি কর্তৃক নগরীর খানজাহান আলী সড়কের পশ্চিম পাশের্^ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলমান রয়েছে। সড়কের একপাশ বন্ধ থাকায় নগরবাসী স্বাভাবিক চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। কেসিসি ঠিকাদার কর্তৃক ওয়াসার ক্ষতিগ্রস্থ নগরীর কেডিএ এপ্রোচ ও ইসলামপুর দোলখোলা সাতরাস্তার মোড়স্থ সড়কে কাজ চলমান রয়েছে। চলমান ওই কাজে নগরবাসীর স্বাভাবিক চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগী নগরবাসী। খুলনা ওয়াসা নগরীর ১৭-৩১ নং ওয়ার্ডে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রেখেছে। ওই প্রকল্পে ওয়াসা সোনাডাঙ্গা মজিদ স্বরণীর কেডিএ এপ্রোচ মোড়ে একাংশ রাস্তা বন্ধ করে কাজ চলমান রাখার দরুন নগরবাসীর স্বাভাবিক চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে, পোহাচ্ছে চরম দুর্ভোগ। খুলনা সড়ক বিভাগ কর্তৃক নগরীর গল্লামারী এলাকায় ব্রীজের কাজ চলমান থাকায় রাস্তা কিছুটা সংর্কীণ হওয়ার দরুন যাতায়াতে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। একই সাথে নগরীর বৈকালী স্টেডিয়াম সম্মুখে সূয়ায়েজ ড্রেনের কাজ চলমান থাকায় খুলনা-যশোর সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিকল্প রাস্তা তৈরী করা হলেও স্বাভাবিক চলাচল চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। ভুক্তভোগী নগরবাসী দ্রুততম সময়ের ওই সকল উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে তাদের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন। একই সাথে চলতি বর্ষা মৌসুমে এসব কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
খুলনা তালতলা হাসপাতাল রোড এলাকার বাসিন্দা রিক্সা চালক মো. শাহ আলম জানান, আমি ৪৫ বছর ধরে খুলনা শহরে রিক্সা চালায়। রূপসা স্ট্যান্ড হতে ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কাজ চলছে তো চলছে শেষ হয় না। সারা বছর ধরে কাজ চলছে। এই রাস্তার বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থা। সুস্থ মানুষ এই রাস্তা ধরে চলাচল করলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। বর্ষাকালে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। রাস্তার এমন অবস্থা রোগী নিয়ে এ্যাম্পুলেন্সে করে গেলে, হাসপাতালে পৌছানোর আগে রোগী মারা যাবে। রাস্তার এমন খারাপ অবস্থা দেখেও কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইজিবাইক চালক শরিফুল জানান, ৪ বছর ধরে শিপইয়ার্ড রাস্তার একই অবস্থা খুবই বাজে। সারা বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এই রাস্তাটা এই এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য প্রধান একটি সড়ক। রূপসা হতে ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা। সড়কের এই অবস্থার কারণে সাধারন মানুষ যাতায়াতে খুব কষ্ট পাচ্ছে, গাড়ী নষ্ট হচ্ছে। বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে এই রাস্তা ধরে চলাচল করতে হচ্ছে। রাস্তাটা কি ঠিক হবে না?
পথচারী মো. হামিম তালুকদার বাবু জানান, খুলনায় উন্নয়ন হচ্ছে এটা ভালো দিক। তবে জন দুর্ভোগ সৃষ্টি করে উন্নয়ন, মানা যায় না। অপরিকল্পিত উদ্যোগের কারণেই সাধারন মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষার সময় এই দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। বৈকালি স্টেডিয়াম সম্মুখে রাস্তা বন্ধ করে কালর্ভাট নির্মাণ করা হচ্ছে। বিকল্প যে সাময়িক রাস্তা তৈরী করা হয়েছে, ওই রাস্তা দিয়ে পার হওয়ার সময় ঝাঁকুনিতে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমি কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়ি। হাসপাতালে যাওয়ার সময় ওই স্থানের ঝাঁকুনিতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ি। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিৎ বিশেষ করে বর্ষার সময় বাদে। মজিদ স্মরণীর কেডিএ এপ্রোচ মোড়ে ওয়াসার কাজে দুর্ভোগে পড়া বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফাহিম জানান, খুলনায় সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। আজ সিটি কর্পোরেশন, কাল ওয়াসা, পরশু কেডিএর উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ লেগেই থাকে। খুলনার উন্নয়নে কাজ হচ্ছে, এটা ভালো। তবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোনো কাজ করা উচিৎ নয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে। মজিদ স্মরনী কেডিএ এপ্রোচ মোড়ে ওয়াসা রাস্তা বন্ধ করে প্রকল্পের কাজ করছে। এতে করে সাধারন মানুষের চলাচলে ভীষণ দুর্ভোগ বেড়েছে।
খুলনা খানজাহান আলী সড়কের ব্যবসায়ী হামিদ জানান, কেসিসি জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্য সারা বছর জুড়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা কাজ করছে, এ কাজ লাগাতার লেগেই আগে। তারপরও সামান্য বৃষ্টিতে খুলনার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে হাঁটুপানি জমে। খানজাহান আলী সড়কের একপাশ বন্ধ করে ড্রেনের কাজ করছে কেসিসি। এতে একদিকে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে অসুবিধা হচ্ছে, অন্যদিকে স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোনো কাজ করা উচিৎ নয় বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, উন্নয়নের নামে সারা বছর জুড়ে খুলনা শহর জুড়ে যে খোঁড়াখুঁড়ি এতে জনভোগান্তি চরমে এটা বিষয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেবল নগরবাসী নয়, বাইরে জেলা-শহর থেকে যারা খুলনা শহরে বসবাস করেছেন সবাই চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উন্নয়ন প্রকল্প মানুষের স্বস্তির জন্য, ভোগান্তি দূর করার জন্য। কিন্তু খুলনা মহানগরীতে দীর্ঘ একযুগ যে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে তা জনগনের স্বস্তির বিপরীতে দুর্ভোগ বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকদিন আগের একটা প্রকল্প খুলনা শিপিয়ার্ড রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প। বর্ষা মৌসুমে তারা দীর্ঘদিন এই খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রেখে দেওয়ার দরুন দুর্ভোগ বহুগুণে বেড়ে গেছে। এই দুর্ভোগের বিষয়ে দুটি প্রশ্ন সামনে এসে যায়। ঠিকাদারের খুটির জোর কোথায়? কেন তারা কাজ ফেলে রেখেছে? আর কর্র্তৃক্ষপ কেন ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করাতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের দুর্বলতা কোথায়? রয়েছে সমান্বয়হীনতার অভাব। দেশের প্রতি, দেশের জনগণের প্রতি, দেশের অর্থের প্রতি দায়বদ্ধতা বা দরদ না থাকার দরুন যে যার মতো প্রকল্প নেন, নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়াই দুর্ভোগ বাড়ে। খুলনার উন্নয়নে যে সংস্থা গুলো কাজ করেন তাদের এক জায়গায় বসে সমান্বয় করে কাজ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। সমান্বয় করে কাজ করলে একদিকে অর্থের অপচয় রোধ হবে, অন্যদিকে জনদুর্ভোগ কমবে।
এ ব্যাপারে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র খুলনা মহানগর সাঃ সম্পাদক এড.কুদরত-ই খুদা বলেন, প্রথমত, খুলনায় সারা বছর ধরে জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়নের যে কর্মকা- চলে, আমার ভাষায় এটি একটি অপরিকল্পিত উদ্যোগ। দ্বিতীয়ত, দপ্তর গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। যে যখন ইচ্ছা তখন শহরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি করে উন্নয়নের কাজগুলো করছে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থাকলে, দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে তারা স্বেচ্ছায় সমান্বয় করে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতো। প্রতিটি কাজের একটা মৌসুম আছে, মেয়াদ আছে। বিশেষ করে শুকনা মৌসুমে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করলে জনগণের দুর্ভোগ কমবে। যারা সরকারী, সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, তারা নিজেদের জনগণের কর্মী মনে করেন না, এ কারণে শহর থেকে অপরিকল্পিত উদ্যোগে জনগণের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছেনা, কারণ তারা জনগণের কথা ভাবলে, আগেই দুর্ভোগের কথা ভাবতেন। খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব ব্রার্দাসের প্রকল্প ম্যানেজার (পিএম) মো. আশরাফ আলী জানান, বর্ষার কারণেই আমাদের কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্ষা কমলেই আমরা কাজ শুরু করবো। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে সড়ক দৃশ্যমান হবে বলে আশা রাখি। জনদুর্ভোগ কমাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা রাখি। এ ব্যাপারে খুলনা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক খান সেলিম আহম্মদ জানান, চলাচলে একটু সাময়িক দুর্ভোগ হলেও নগর ও নগরবাসীর উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। খুলনার গুরুত্বপূর্ন সড়কে বর্ষার জন্য চলমান কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কেডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মোরতোজা আল মামুন জানান, শিপিয়ার্ড সড়কে সাধারন মানুষের চলাচলে যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, খুলনার একজন সাধারন মানুষ হিসাবে এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অফিসিয়ালি কিছু কিছু পর পর ঠিকাদারকে ডাকা হচ্ছে, সর্তককরণ করা হচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে শিপিয়ার্ড সড়কে কাজ সম্পন্ন করা জন্য। তিনিও আশ^াস্ত করছেন যথাসময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করা জন্য। আমাদের প্রত্যাশা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদার কাজটি সম্পন্ন করে হস্তান্তর করবে। তারপরও যদি যাদের বিলম্ব হয়, সার্বিক বিষয়ে মন্ত্রনালয় সিদ্ধান্ত নিবে। এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী খান মশিউজ্জামান বলেন, উন্নয়ন কার্যক্রমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হোক এটা আমাদের কাম্য নয়। বিষয়টি বিবেচনা করে ওয়াসাকে চলতি বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোড়াখুড়ি না করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনদুর্ভোগ এড়াতে সমান্বয়ের মাধ্যমে ওয়াসা কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থ কেডিএ এপ্রোচ সড়ক ও দোলখোলা সাতরাস্তা মোড় কেসিসি ঠিকাদারের মাধ্যমে দ্রুত কাজ শেষ করা হচ্ছে। এছাড়া বর্ষার জন্য অধিকাংশ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।