খালিশপুরে বোনের কাছে বসত বাড়ি বন্ধক রেখে অসহায় রিক্সা চালক বিপাকে

ভাই-বোনের পাল্টাপাল্টি মামলা!
স্টাফ রিপোর্টার : জরুরী টাকার প্রয়োজনে রিক্সাচালক ভাই ওয়াসিম নিজের আপন বোনের কাছে বসত বাড়ি দুই লাখ টাকায় বন্ধক রেখে বিপাকে পড়েছে। এমনকি বোন রেশমা ভুয়া এ্যাফিডেভিট তৈরী করে জাল স্বাক্ষর করে জোরপূর্বক দখল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে মামলা করেও এখনও পর্যন্ত কোন প্রতিকার মেলেনি। এঘটনায় ভুক্তভোগী রিক্সা চালক ওয়াসিম (২০ ফেব্রুয়ারী) খুলনার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর আমলী আদালতে বোন রেশমা বেগম সহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। রিক্সাচালক মো. ওয়াসিম (৪০) খুলনা মহানগরীর খালিশপুর মদিনাবাগ আবাসিক এলাকার মো. ইউনুস আলীর ছেলে। অপরদিকে বোন রেশমা বেগম তার ভাই ওয়াসিমের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন, খালিশপুর ১নং বিহারী ক্যাম্প (পুরাতন কলোনী) এলাকার এস এম মোর্শেদ আহম্মেদ মনি, (৪৫), মোস্তফা নজর (৪০), মো. ফয়েজ আহম্মেদ সুধীর (৪৫), আফজাল (২২), সাব্বির (২৬), সোহেল (২৭), মাসুদ (২৬), শহিদুল ইসলাম গাজী (৪১), আবুল কালাম আজাদ (৪০)। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১নং আসামী রেশমা বেগম তার ভাই ওয়াসিমের ১নং ক্যাম্পের ২১৪ নং বাড়ী যার ৩টি রুম ও ১টি বাথরুম জবর দখলের চেষ্টা করে আসছে। তারই ধারাবহিকতায় অত্র মামলার বাদী ওয়াসিম ১নং আসামী সহ অন্যান্য আসামীদেরকে সম্পত্তি জবর দখলের কারন জিজ্ঞাসা করলে বোন রেশমা উক্ত সম্পত্তি খরিদ করে নিয়েছে। উক্ত সম্পত্তি বিষয়ে আসামীদের নিকট রক্ষিত কাগজপত্র দেখাতে বললে ১নং আসামী তার একটি জাল এ্যাফিডেভিট দুর থেকে বাদীকে দেখিয়ে নিয়ে যায়। বাদী তার বর্নিত ৩টি রুম ও ১টি বাথরুম এ্যাফিডেভিট মুলে“ঘর বন্ধকের চুক্তিপত্র” হিসেবে ৩টি ১’শ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে “ঘর বন্ধকের চুক্তিপত্র” সম্পাদন করে দুই বছর মেয়াদে ১নং আসামীর নিকট হতে দুই লাখ টাকা গ্রহন করে। তবে বাদীর মৌখিক কথা থাকে ১নং আসামীর বন্ধকী বাসায় বসবাস করবে এবং প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা হিসেবে ২৪ মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা সেই হিসেবে মুল ২ লাখ টাকা সহ সর্বমোট ৩ লাখ বিশ হাজার টাকা দিয়ে মেয়াদঅন্তে বাদী ঘর বুঝিয়ে নিবে। ইতোমধ্য ১নং আসামীর ভাড়ার টাকার আবশ্যকতায় ২০২৪ সালের ৮ মার্চ ১’শ টাকার নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে সাক্ষীগনের মোকাবেলায় এক বছরের ভাড়া হিসেবে ৬০ হাজার টাকা বাদীর নিকট হতে তার বোন রেশমা গ্রহন করে। পরে ১নং আসামী অন্যত্র নতুন ভাড়াটিয়া ঠিক করে উক্ত ঘরে বেশী ভাড়ায় নতুন ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে বাদীকে জোর পূর্বক নামিয়ে দেয়। বাদী নিরুপায় হয়ে তার কলেজ পড়ুয়া কন্যা রোশনীকে নিয়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে। কিন্তু উক্ত কাজে ১নং আসামী সন্তুষ্ট না হয়ে সহযোগী আসামীদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় একটি ভুয়া এ্যাফিডেভিট তৈরী করে বাদীর জাল স্বাক্ষর করে এলাকায় তার ঘর তিনটি ক্রয় করে নিয়েছে বলে প্রচার করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী বিকেল আনুমানিক ৫ টায় ১নং বিহারী ক্যাম্পে গেলে বোন রেশমা পূর্বের ঘর বন্ধকী চুক্তিপত্রের কথা অস্বীকার করে ঘরটি ক্রয়
করে নিয়েছে বলে ভাই ওয়াসিমের মুখের উপরে সাফ জানিয়ে দেয়। অন্যান্য সহযোগী আসামীরা একই সাথে মামলার বাদী ওয়াসিমকে উক্ত সম্পত্তিতে না আসার জন্য প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে এবং বলে এ বিষয় নিয়ে কাউকে কিছু জানালে প্রানে শেষ করে ফেলবে বলে ভয়ভীতি প্রদান করে। উক্ত আসামীরা এলাকার চিহ্নিত জাল জালিয়াতি চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে মামলায় বলা উল্লেখ করা হয়। এদের অত্যাচারে এলাকার সাধারন মানুষ ও অত্র মামলার বাদী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আসামীদের সাথে আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এমনকি বিষয়টি সমাজের স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো সহ ন্যায় বিচার পেতে খালিশপুর থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু ওয়াসিমের বোন সহ তার সহযোগীদের রাজনৈতিক প্রভাব ও পেশি শক্তির কারনে ন্যায় বিচার না পেয়ে ২০২৪ সালের ২৯ জুন খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং-৩৯। এব্যাপারে ভুক্তভোগী ওয়াসিম বলেন, আমি বাড়ি বন্ধক রেখে আমার বোনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছি। কিন্তু আমি বাড়ি বিক্রি করিনি। জালিয়াতি করে ভুয়া স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে বাড়ি কিনে নেওয়ার দাবি জানাই। এগুলো সব মিথ্যা। আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমি এর ঘটনার সঠিক বিচার চাই। বোন রেশমা বেগম বলেন, দুই বছর আগে আমার ভাই ওয়াসিম ঘর বন্ধব রেখে দুই লাখ টাকা নেয়। আরও টাকার প্রয়োজন হলে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। তারপরও আমার ঘর ভাংচুর করে এবং আমাকে মারধর করে। সরকারি লিজকৃত বস্তির যায়গার বাড়িটি ৩’শ টাকার স্ট্যাম্পে এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ক্রয় করে নিই। এঘটনার পরেও মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে এবং আমার স্বামীকে ১০ দিন জেল খাটানো হয়। খালিশপুর থানায় ৩১ জুলাই আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আমি মামলা করি। আমি আমার ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। সঠিক বিচারের মাধ্যমে আমার স্বামী সন্তান নিয়ে সুষ্ঠু জীবনযাপন করতে চাই।