সম্পাদকীয়

চিকিৎসা ব্যয় জনবান্ধব হতে হবে

করোনারি স্টেন্টের দাম

সরকার চিকিৎসা খাতে সংস্কার সাধনের অংশ হিসাবে সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা জনগণের, বিশেষ করে হৃদরোগীদের জন্য একটি বড় ধরনের সুসংবাদ নিয়ে এসেছে। দেশে বিক্রি হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বড় কোম্পানির করোনারি স্টেন্টের (রিং) দাম পুনর্নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে প্রতিটি স্টেন্টের দাম ৩ হাজার থেকে ৮৮ হাজার টাকা পর্যন্ত কমবে। স্বাভাবিকভাবেই হৃদরোগীরা এ সিদ্ধান্তে কিছুটা স্বস্তি পাবেন। জানা যায়, অ্যাবট, বোস্টন সায়েন্টিফিক ও মেডট্রনিক কোম্পানির ১০ ধরনের স্টেন্টের দাম আগের তুলনায় অনেক কমেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে (ডিজিডিএ) নতুন মূল্যের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে অনুমোদিত দামসংক্রান্ত তালিকা হাসপাতালে দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখা এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্টেন্টের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ হিসাবে ৫ শতাংশের বেশি আদায় না করতে এবং নির্ধারিত দামের বাইরে কার্ডিওভাসকুলার বা নিউরো ইম্পল্যান্ট ডিভাইস কিনতে না দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মূল্য হ্রাস সাধারণ মানুষের হৃদরোগ চিকিৎসায় বড় ধরনের স্বস্তি নিয়ে আসবে। স্টেন্টের দাম হ্রাস পাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে রোগীরা উন্নত সেবা নিতে পারবেন। উল্লেখ্য, হার্টের রিং নিয়ে বছরের পর বছর সিন্ডিকেটের বাণিজ্য হৃদরোগ চিকিৎসায় নৈরাজ্যের ভয়াবহ চিত্রকেই প্রকাশ করেছে। বিগত সরকারের আমলে দেশের স্বাস্থ্য খাতের এমন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, সেই সঙ্গে অদক্ষ পরিচালনার চিত্র একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে উঠে এলেও কার্যত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হতে দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় হৃদরোগীদের জীবনদায়ী চিকিৎসাসামগ্রী করোনারি স্টেন্টের (হার্টের রিং) দাম কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে দেখলাম আমরা। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ দিতেই হবে। বলা বাহুল্য, দেশে দুর্নীতি-জরাগ্রস্ত খাতগুলোর অন্যতম স্বাস্থ্য খাত। এ খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে অনিয়ম রয়েছে, আমরা আশা করব, সরকার সেদিকে নজর দিয়ে কার্যকর সংস্কার করে তা দূরীকরণে সফল হবে। স্বাস্থ্য খাতের দৃশ্যমান ক্ষতগুলো এভাবে উপশম করার পাশাপাশি অদৃশ্য ক্ষতগুলোও শনাক্ত করে যথাসম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button