আন্তর্জাতিক

নিকোলাস মাদুরোকে ধরিয়ে দিলে ৫ কোটি ডলার, কঠোর অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র

প্রবাহ ডেস্ক : দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ নতুন নয়। তবে এবার তাকে ‘বিশ্বের শীর্ষ মাদক চোরাকারবারিদের একজন’ আখ্যা দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার পুরস্কারের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ কোটি ডলার করেছে ওয়াশিংটন। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন। বন্ডি জানান, মাদুরো কেবল রাজনৈতিক স্বৈরতন্ত্রেই সীমাবদ্ধ নন, বরং আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণেও যুক্ত। তিনি অভিযোগ করেন, মাদুরো ভেনেজুয়েলার ভয়ংকর অপরাধী গ্যাং ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ এবং মেক্সিকোভিত্তিক কুখ্যাত ‘সিনালোয়া কার্টেল’-এর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ) এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ টন কোকেন জব্দ করেছে, যার মধ্যে অন্তত ৭ টনের সঙ্গে মাদুরোর সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই ঘোষণা শুধু একটি আর্থিক পুরস্কারের বিষয় নয়, বরং মাদুরো প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়ারই ধারাবাহিকতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুদিন ধরেই মাদুরোর কঠোর সমালোচক। ২০১৩ সালে হুগো চাভেজের মৃত্যুর পর ইউনাইটেড সোশালিস্ট পার্টির নেতা হিসেবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নিকোলাস মাদুরো। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিরোধী মত দমন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ উঠে আসছে নিয়মিতভাবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিতর্কিত নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় বসেন মাদুরো। নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তোলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ। যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ বছর মাদুরো প্রশাসনের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এদিকে, ভেনেজুয়েলার পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এ পুরস্কার ঘোষণার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে মাদুরো পূর্বেও একাধিকবার মাদক চোরাচালানের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল। তিনি বলেন, “এই ঘোষণা যে পক্ষ থেকে এসেছে, তা মোটেও অবাক হওয়ার কিছু নয়।” বরং মার্কিন প্রশাসনের অন্য এক আলোচিত ইস্যু—যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টিনের মামলার সমালোচনা থেকে মনোযোগ সরাতে এটা চালাকিপূর্ণ চেষ্টা বলে মনে করেন গিল। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মাদুরো শুধু আন্তর্জাতিক মাদকপাচারের রসদই জোগাচ্ছেন না, বরং কলম্বিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফার্ক-এর সঙ্গে মিলে কোকেনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আমেরিকান সমাজকে নষ্ট করতে চেয়েছেন। এই অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদ থেকেই উঠে আসছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ৫ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল বন্ডি এ পুরস্কারের কার্যকর বাস্তবায়ন কৌশল স্পষ্ট করেননি। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভেনেজুয়েলার সাবেক সামরিক গোয়েন্দা প্রধান উগো কারবাহান—যিনি এক সময় মাদুরোর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন—গত জুনে মাদ্রিদে গ্রেপ্তার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণের পর একাধিক মাদক মামলায় দোষ স্বীকার করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি কম শাস্তির বিনিময়ে মাদুরোর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে সম্মত হয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যকার সম্পর্ক এখন ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটপূর্ণ পর্যায়ে। এই পরিস্থিতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা নির্ভর করবে উভয় দেশের কূটনৈতিক কৌশলের ওপর।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button