জাতীয় সংবাদ

ভোটার হওয়ার জন্য অর্ধলক্ষ প্রবাসীর আবেদন

প্রবাহ রিপোর্ট : ভোটার হওয়ার জন্য অর্ধলক্ষ প্রবাসী সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে নয়টি দেশে প্রবাসীদের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম চলমান। ৬ আগস্ট পর্যন্ত মোট আবেদন করেছেন ৪৯ হাজার ৫৭৪ জন। এদের মধ্যে দশ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ২৯ হাজার ৭৬৩ জন। তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং অনুমোদন হয়েছে ২১ হাজার ৯৭১ জনের আবেদন, তারা ইতোমধ্যে ভোটার হয়ে গেছেন। সার্ভারে আপলোড হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ জনের আবেদন। সার্ভারে আপলোড হওয়ার অপেক্ষায় আছে ৩ হাজার ৯৩৭ জনের আবেদন। এদিকে অনেকের আবেদন তথ্য ঘাটতি ও অন্যান্য কারণে বাতিলও হয়েছে, এদের সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৭ জন। এদিকে, প্রবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীরা। এই দেশ থেকে আবেদন করেছেন ২০ হাজার ২০৯ জন। সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে অস্ট্রেলিয়ায়, ২৫ জন। সবচেয়ে বেশি আবেদন বাতিলও হয়েছে আমিরাতের, দুই হাজার ১৬৯টি। সবচেয়ে কম বাতিল হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়, একজনের। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এসব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে রয়েছে বেশি প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে, ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছেন নিউজিল্যান্ডে, দুই হাজার ৫শ জন। বর্তমানের নয়টি দেশের ১৬টি স্টেশনে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার কার‌্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি। দেশগুলো হলো-সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। এদিকে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, নতুন করে পাঁচটি দেশে ভোটার নিবন্ধনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেয়েছি। ইকুয়েপমেন্ট রেডি করতে হবে। সেটার জন্য কাজ চলছে। তিনি বলেন, জাপানেও সবকাজ প্রায় চূড়ান্ত। পাবলিক আইপি পেতে একটু সময় লাগবে। ওমান, দ. আফ্রিকা, জর্ডান, যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপে ভোটার কার্যক্রম শুরু করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি মিলেছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর সে লক্ষ্য নিয়েই প্রবাসে ভোটার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে ইসি। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, তার কমিশন অন্তত শুরুটা করতে চায়। সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে চায়। সিইসি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মতো আমরা নির্বাচন কমিশনও আগামী নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে যে পদ্ধতিতেই আমরা এগোই না কেন, প্রথমে পাইলটিং পরে স্বল্প পরিসরে করতে হবে, এরপর বড় পরিসরে যেতে হবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভোটার কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশপাশি প্রবাসীদের ভোটিং পদ্ধতি নির্ধারণেও কাজ করছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট নেবে কমিশন। প্রবাসীদের ব্যালট পেপারে কোনো প্রার্থীর নাম থাকবে না। কেবল প্রতীক থাকবে। তবে ভোটাররা অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করলে প্রার্থীদের তালিকা দেখতে পাবেন। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, প্রবাসীদের কাছে সিম্বল ব্যালট (প্রতীক সম্বলিত) যাবে। যাতে সময় কম লাগে। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পরে সিম্বল ব্যালটে ভোট দেবেন। ইসিতে এসে পোস্ট অফিস ব্যালট নিয়ে যাবে। প্রবাসী ভোটারদের নির্বাচনের তারিখের তিন সপ্তাহ আগে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর তারা অনলাইনে প্রার্থীর তালিকা দেখতে পারবেন। সে অনুযায়ী পছন্দের প্রার্থী দেখে ব্যালটে থাকা সেই প্রার্থীর সিম্বলে ভোট দেবেন। প্রবাসীদের ব্যালটে শুধু প্রতীক রাখার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবচেয়ে কাছের দেশেও ব্যালট পেপারে পাঠাতে সময় লাগবে ১৮ দিন। দূরের দেশগুলোতে ২৮ দিন। তাই প্রার্থীর নামসহ ব্যালট পাঠাতে হলে যে সময়ের প্রয়োজন হবে তা প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর থাকবে না। পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রে সেপ্টেম্ব^র থেকে প্রচার ও ভোটারশিক্ষণের কাজ চলবে। তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তে আদালতের আদেশে প্রার্থী পরিবর্তন হলে সেখানে পোস্টাল ব্যালট হবে না। তবে আইনি কার্যক্রম যেন দ্রুত হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আবুল ফজল জানান, এটা ব্যয় সাপেক্ষ প্রসেস। আনা-নেওয়া করতে ব্যালট প্রতি ৫শ টাকা থাকবে। এরপর ছাপানোর খরচও আছে। আবার নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হবে। প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য সবমিলিয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লাগবে। বিদেশে বসে ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র (ফরম-২(ক), মেয়াদ সম্বলিত বাংলাদেশি পাসপোর্ট, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। এদিকে বিশেষ ৫৬টি উপজেলা/থানার (চট্টগ্রাম অঞ্চল) [তথ্য সম্বলিত] নাগরিকদের জন্য ‘বিশেষ তথ্য ফরম’ পূরণ, শিক্ষা সনদ, পিতা-মাতার এনআইডি, মৃত হলে মৃত্যু সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স/টি.আই.এন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কতিপয় দেশের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নিকাহনামা এবং স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান/মেয়র/সিইও কর্তৃক), ইউটিলিটি বিলের কপি (ভোটার এলাকার ঠিকানার বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের কপি, ভাড়াটিয়া হলে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র ও বাড়িওয়ালার অনাপত্তিপত্র জমা দিতে হবে। বাধ্যতামূলক নয়, এমন তথ্যগুলো নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দিতে না পারলে প্রবাসী নাগরিকরা দেশে বসবাসকারী তাদের আত্মীয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগটি হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা। পরবর্তীতে ২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান নাসির কমিশন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button