আন্তর্জাতিক

কিয়েভ ভূমি ছাড়বে না, সতর্ক করলেন জেলেনস্কি

মার্কিন-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠক চূড়ান্ত

প্রবাহ ডেস্ক: শান্তির বিনিময়ে রাশিয়ার কাছে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না ইউক্রেন। গত শনিবার এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এর আগে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় এক শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছে। তবে এক সতর্কবার্তায় ইউক্রেন ও ইউরোপ বলেছে, আলোচনায় কিয়েভকেও থাকতে হবে। শুক্রবার বৈঠকের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘দুই পক্ষের ভালোর জন্যই কিছু অঞ্চল বিনিময় হবে। ’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। কয়েক ঘণ্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলেনস্কি লেখেন, ‘ইউক্রেনের জনগণ দখলদারের কাছে তাদের জমি দেবে না। তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে কোন সিদ্ধান্ত, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত, হবে শান্তির বিরুদ্ধেই সিদ্ধান্ত। ’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা কিছুই অর্জন করতে পারবে না। ’ তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে যুদ্ধ শেষ করা যাবে না। ’ বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক ফোনালাপে জেলেনস্কি টেকসই শান্তির জন্য ইউক্রেনের মিত্রদের প্রতি ‘স্পষ্ট পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানান। পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের আগে নিজেদের অবস্থান সমন্বয় করতে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ও যুক্তরাজ্যসহ কিয়েভের মিত্রদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৃটেনে একত্র হন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জেলেনস্কি, স্টারমার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎসের সঙ্গে ফোনালাপের পর বলেন, ‘ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ইউক্রেনীয়দের ছাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। আলোচনায় ইউরোপকেও থাকতে হবে। ’ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গত শনিবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ, জেলেনস্কির শীর্ষ সহযোগী আন্দ্রি ইয়েরমাক এবং ইউরোপীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের অভ্যর্থনা জানান। ল্যামি এক্স-এর এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন অটল রয়েছে। আমরা ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ’ গত শনিবার রাতে এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘যুদ্ধের সৎ সমাপ্তি ঘটতে হবে। আর এই যুদ্ধ শেষ করার দায়িত্ব রাশিয়ার, তারাই যুদ্ধটি শুরু করেছিল। ’ চলতি বছর রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা আলোচনা হলেও কোনো ফল আসেনি। সামনের এই বৈঠক যুদ্ধের সমাধান কতটা এগিয়ে নেবে, তা নিয়েও সংশয় রয়ে গেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কোটি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও কিয়েভের যুদ্ধবিরতির আহ্বান একাধিকবার প্রত্যাখ্যান করেছেন পুতিন। ক্ষমতায় আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা এখনই জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি নন। জেলেনস্কি বরাবরই তিন পক্ষের বৈঠকের পক্ষে। তাঁর যুক্তি, পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনাই শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি আনতে পারে। আলাস্কায় এই প্রথম ট্রাম্প-পুতিন কোন বৈঠকে বসবে। এর আগে জেনেভায় জো বাইডেন ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক হয় ২০২১ সালের জুনে। তার নয় মাস পরই ইউক্রেনে সেনা পাঠায় মস্কো। আলাস্কার স্থান নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলেনস্কি বলেন, ‘এই মুহূর্তে যে যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের ভূমি ও মানুষের ওপর যুদ্ধ চলছে সেখান থেকে এটি অনেক দূরে। ’ এদিকে ক্রেমলিনের মতে, আলাস্কা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা। এখানে দুই দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ মিলিত হয়। তাই এই জায়গাটা নির্বাচন করা ‘যুক্তিসঙ্গত’। পাশাপাশি মস্কো ট্রাম্পকে রাশিয়া সফরেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ট্রাম্প ও পুতিন সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাপানে জি-২০ সম্মেলনে মুখোমুখি হন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে একাধিকবার টেলিফোনে কথা বললেও ট্রাম্প এখনো ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি আনতে পারেননি। যদিও তিনি দাবি করেছিলেন, তা দ্রুত সম্ভব। শুক্রবার আলাস্কা বৈঠকের আগে মিত্রদের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন পুতিন। পাশাপাশি ব্রাজিল, চীন ও ভারতের নেতাদের সঙ্গে তিনি কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। গত শনিবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে ৪০ মিনিট কথা বলেন পুতিন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পুনরায় সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে অবস্থান জানান। রাশিয়ার তেল কেনায় ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। উদ্দেশ্য মস্কোকে আলোচনায় টানা। চীনকেও একই ধরনের শুল্কের হুমকি দিয়েছেন, যদিও এখনো তা কার্যকর করেননি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button