পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল: ‘রেফার সেন্টার’ হওয়া কি অবশ্যম্ভাবী?

পিরোজপুর জেলা হাসপাতালকে অনেকেই এখন রসিকতা করে ‘রেফার সেন্টার’ বলছেন, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে তিক্ত বাস্তবতা। ১০০ শয্যার এই সরকারি হাসপাতাল প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী সেবা নিতে এলেও চিকিৎসক ও কর্মচারীর মারাত্মক সংকটে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না। ফলে সাধারণ অসুস্থতা থেকে শুরু করে জরুরি সেবার জন্যও রোগীদের বরিশাল, খুলনাসহ অন্যান্য শহরে রেফার করা হচ্ছে। হাসপাতালের ৩৫টি চিকিৎসক ও কর্মকর্তার পদের বিপরীতে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ১৫ জন। কনসালট্যান্ট পদের অবস্থা আরও করুণ-১৭টির মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। সার্জারি, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া ও ডেন্টাল বিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, যা কার্যত এসব সেবা বন্ধ থাকার সমান। শুধু চিকিৎসক নয়, সেবিকা ও কর্মচারীর ক্ষেত্রেও ঘাটতি ভয়াবহ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ২৪ জন কর্মীর প্রয়োজন থাকলেও আছেন মাত্র চারজন, যা হাসপাতালে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য দায়ী। রোগী ও স্বজনদের ক্ষোভও তাই স্বাভাবিক। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, ডাক্তার দিনে একবার এলেও পরে আর খোঁজখবর থাকে না; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অবস্থা এমন যে বাথরুম ব্যবহার করাই কষ্টকর। ওষুধ সংকটে রোগীদের বাইরে থেকে কিনে নিতে হচ্ছে, যা গরিব ও মধ্যবিত্তের জন্য বাড়তি বোঝা। স্বাস্থ্যসেবার এই সংকট শুধু স্থানীয় সমস্যাই নয়, বরং দেশের গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার সামগ্রিক দুর্বলতার প্রতিফলন। জেলা সদর হাসপাতাল যদি পর্যাপ্ত চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না পায়, তবে সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা কোথায়? সমাধানহীন রেফারের এই প্রবণতা বন্ধ করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও কর্মচারী নিয়োগ, বিশেষজ্ঞ পদে স্থায়ী নিয়োগ, সরকারি ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এ হাসপাতাল শুধু ‘রেফার সেন্টার’ নয়, বরং প্রকৃত অর্থেই জেলা সদর হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করতে পারে। পিরোজপুরের মতো একটি জেলায়, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা সীমিত, সেখানে এই সংকট সমাধানে দেরি মানে মানুষের ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়া। এখনই সময়, কথার আশ^াসের বদলে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।