রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির পরিবর্তন চান ৯০% মানুষ

# সুজনের জরিপ #
প্রবাহ রিপোর্টঃ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছে বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। এছাড়া নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠনের পক্ষে ৮৩ শতাংশ মানুষ একমত হয়েছে; এছাড়া একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না-এই পক্ষে আছেন ৮৯ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন চান ৭১ শতাংশ মানুষ। সুজন প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত যাচাইয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে তথ্য উপস্থাপন করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। তিনি বলেন, গত মে থেকে জুলাই মাসে পরিচালিত হয়েছে জনমত জরিপ। এতে দেশের সবগুলো জেলার মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। জরিপে অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ৩৭৩ জন। এরমধ্যে নারী ৩৩৫ জন, পুরুষ ১ হাজার ৩৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন ৫ জন। নাগরিক সংলাপ হয়েছে ১৫টি। জরিপে অংশ নেওয়া সবাইকে ৪০টি প্রশ্ন করা হয় বলে জানিয়েছেন একরাম হোসেন। সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ে উঠে আসা তথ্যের বরাতে বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দেওয়ার চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর বদলে পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করে। সেগুলো হল– সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি। সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ- এই চার বামপন্থি দল বলে, বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দেওয়া যাবে না। বরং কমিশন প্রস্তাবিত নতুন মূলনীতি এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বলে আসছিল। তবে পরে কমিশন এখন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা তারা মেনে নেয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বলে, কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা একমত। পরে নোট অব ডিসেন্টসহ রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলা হয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম জালিয়াতির তদন্ত চান ৭৯ শতাংশ মানুষ। সুজনের জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মানুষ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছেন, ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নি¤œকক্ষে নারী আসন চান ৬৩ শতাংশ, উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসনের পক্ষে ৬৯ শতাংশ মানুষ একমত হয়েছেন। সুজনের সদস্য একরাম হোসেন বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে একশত আসনের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৭১ শতাংশ। জাতীয় সংসদে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ চান ৮৬ শতাংশ, বিরোধীদল থেকে উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ চান ৮২ শতাংশ, একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান না হতে পারার বিধান চান ৮৭ শতাংশ মানুষ। একই ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার বিধান চান ৮৯ শতাংশ, মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারের পক্ষে ৮৭ শতাংশ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি চান ৮৮ শতাংশ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন চান ৮৭ শতাংশ, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯০ শতাংশ মানুষ। সুজনের জরিপ অনুযায়ী, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের সঙ্গে ইন্টারনেট সেবাকেও মৌলিক অধিকার হিসেবে চান ৮৮ শতাংশ মানুষ। এছাড়া জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল চান ৮০ শতাংশ মানুষ। দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন ও প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি চান ৯০ শতাংশ মানুষ। নির্বাচনকালে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে নির্বাহী বিভাগের এমন কার্যক্রম গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার বিধান চান ৮৭ শতাংশ, প্রত্যেক জনশুমারির পর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৪ শতাংশ। নির্বাচনি ব্যয় নিয়ে অসত্য তথ্য প্রদানকারীর প্রার্থিতা বা ফলাফল বাতিল চান ৮৮ শতাংশ মানুষ৷ চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলে অযোগ্য হিসেবে দেখতে চান ৯২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইনে ভোট চান ৮৭ শতাংশ মানুষ। জাতীয় ভোট নিবন্ধন কতৃপক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৮ শতাংশ। না ভোটের বিধান চান ৮৩ শতাংশ। স্থায়ী স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন চান ৯০ শতাংশ মানুষ। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচিত সরকার কিভাবে সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করবে তার একটি চিত্র ২০১৩ সালে তুলে ধরেছিলাম। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেও আমরা সারা দেশের একটা চনমত জরিপ করেছিলাম। এবারও জনগণ মতামত দিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও মতামত দিয়েছি। যেই সরকারে যাবে তারা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে। সেই হিসাবে জাতীয় সনদের একটা খসড়া আমরা ঐকমত্য কমিশনে জমা দিয়েছি। জনমত সৃষ্টি করাই এ কাজের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন বদিউল আলম মজুমদার। সরকার যে জুলাই সনদ তৈরি করছে এটাকে সহযোগিকতা করা এবং জনমত সৃষ্টি করা।বর্তমান সরকার দল নিরপেক্ষ কী না প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই সরকার কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করে না৷ এই সরকার নির্দলীয় সরকার।সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নির্বাচন হলেই সুশাসন পাওয়া যায়, এমন নয়। বিগত সরকারের সময়ের অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন দুর্নীতি তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে সুজনের প্রস্তাবিত জাতীয় সনদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।