ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই সর্বাত্মক উদ্যোগ জরুরি

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ দেশে এখন এক ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত রোববারে দেওয়া তথ্য বলছে, চলতি বছরে ইতিমধ্যেই ১০১ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ডেঙ্গু। শুধু গত শনিবার আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪৮ জন, মারা গেছেন আরও ৩ জন। বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এবং মৃত্যুর হারও উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, মৃতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও নারী ও শিশুদের মধ্যেও সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি হলেও, বিভাগীয় শহরের বাইরের এলাকাগুলোতেও সংক্রমণ আশঙ্কাজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। মাসভিত্তিক তথ্য থেকে বোঝা যায়, বর্ষা মৌসুমে রোগের প্রকোপ বহুগুণে বেড়ে যায়-শুধু জুলাই মাসেই ৪১ জনের মৃত্যু এ প্রবণতার প্রমাণ। ডেঙ্গুর এ প্রাদুর্ভাব নতুন নয়। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে সংক্রমণ বাড়ে, অথচ প্রতিবারই প্রস্তুতির ঘাটতি চোখে পড়ে। মশকনিধন কার্যক্রম প্রায়ই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে, আর স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের উদ্যোগও মৌসুমি জোশের পর ফিকে হয়ে যায়। ফলে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস না হয়ে বরং আরও বিস্তৃত হয়। এখন সময় শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে মনোযোগ দেওয়ার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেমন বলছেন, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সাধারণ জনগণকে একইসঙ্গে সক্রিয় হতে হবে। প্রতিটি বাসাবাড়ি, অফিস, নির্মাণাধীন ভবন এবং খোলা জায়গায় জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে নিয়মিতভাবে। গণসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজন আইনগত ব্যবস্থা-যেখানে অবহেলার কারণে প্রজননস্থল তৈরি হলে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে জরিমানা বা শাস্তির আওতায় আনা হবে। ডেঙ্গু আজ কেবল চিকিৎসাবিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ নয়, এটি নগর ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনতারও পরীক্ষা। প্রতিরোধমূলক উদ্যোগে গাফিলতি মানে প্রাণহানির দায় বহন করা। এখনই যদি সমন্বিত ও স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে এই প্রাদুর্ভাব আরও ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে-যার মূল্য দিতে হবে পুরো জাতিকে।