দৌলতপুরে অসুস্থ-রোগাক্রান্ত ও নিয়মবর্হিভূত গরু-মহিষের মাংস বিক্রি বন্ধে কেসিসির আদেশ

# কেসিসির এই আদেশ ও নির্দেশনা বাস্তবে বাস্তবায়ণের দাবি সুধী মহলের #
# নিয়ম বর্হিভূত ব্যবসা পরিচালনা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্টদের #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মহানগরীর গরু-মহিষ ও ছাগলের মাংসের দোকানগুলোতে প্রতিদিনই মাংস বিক্রি করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। নগরবাসীকে স্বাস্থ্য সম্মত নিরাপদ মাংস সরবরাহ নিশ্চিতে খুলনা সিটি কর্র্পোরেশনের ভেটেরিনারি শাখা নির্দেশনা অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও আঙ্গুর ফুলে কলা গাছ হওয়ার আশায় কিছু অসাধু মাংস ব্যবসায়ীরা ওই নির্দেশনাকে বৃদ্ধগুলি দেখিয়ে নগরীতে অসুস্থ-রোগাক্রান্ত, পচাঁ-বাসি গরু-মহিষের মাংস বেচাবিক্রি অব্যহত রেখেছে বলে স্থানীয় ও একাধীক ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এবং নগরবাসীকে স্বাস্থ্য সম্মত নিরাপদ মাংস সরবরাহ নিশ্চিতে বুধবার (১৩ আগষ্ট) খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি দপ্তর হতে ভেটেরিনারি অফিসার ড. পেরু গোপাল বিশ্বাস স্মাক্ষারিত এক স্মারক বিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ প্রদান করা হয়। ওই আদেশে খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর বাজারের গরু-মহিষের মাংস ব্যবসায়ীদের কেসিসি প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বলা হয়। ওই আদেশ নিয়ম বর্হিভূতভাবে ব্যবসা পরিচালনা করলে মাংস বিক্রির প্রিমিসেস লাইসেন্স বাতিলসহ পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১১ এবং স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ৫ম তফশীল এর ৯২ ধারা এর ০১, ০৩, ৩৮, ৩৯ উপধারা অনুসারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি জানানো হয়েছে। নগরবাসীকে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ মাংস সরবরাহ নিশ্চিতে কেসিসির ভেটেরিনারি দপ্তর হতে ব্যবসায়ীদের প্রতি গৃহিত নির্দেশনা সমূহ- কসাইখানার বাইরে গরু-মহিষ জবাই করে বিক্রয় করা যাবে না। মহানগরীর বাইরে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাবিহীন জবাইকৃত পশুর মাংস কেসিসি এলাকায় প্রবেশবিক্রয় করা যাবে না। অসুস্থ, রোগাক্রান্ত, গর্ভবতী, দুগ্ধবতী, অপ্রাপ্ত বয়স্ক (বিধি মোতাবেক) গরু-মহিষ কসাইখানায় আনা যাবে না। এমনকি নিজ দায়িত্বে বা গোপনেও জবাই করে মাংস বিক্রয় করা যাবে না। বাজার বা দোকানে কেসিসির সীল সম্বলিত গরু- মহিষের মাংস বাদে বিক্রয় করা যাবে না। মাংস ও মাংস উপজাতপণ্য বিক্রির ব্যবসায়ীগণকে কেসিসির প্রিমিসেস/মাংস বিক্রয়ের লাইসেন্স সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ছাড়া গরু-মহিষ ইত্যাদি কসাইখানায় আনা, জবাই, মাংস ব্যবসা প্রবেশ,কার্যক্রম পরিচালনা, ব্যবসা করা, মাংস প্রস্তুত ইত্যাদি করা যাবে না। ফুটপাতে অবৈধভাবে রাস্তা বা ফুটপথ দখল করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাংসের ব্যবসা করা যাবে না।
বেসরকারি চাকুরীজীবি ফারুক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, অনেক সাধারণ মানুষের ইচ্ছা আছে সাধ্য নেই গরুর মাংস কেনার। বাচ্চাদের আবদারে ঋণ করে নতুবা কষ্টে অর্জিত টাকা দিয়ে এক বা দেড় কেজি গরুর মাংস কিনেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। মানুষ এতো খারাপ হতে পারে? আমাদের নীতি-নৈতিকতা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে? ওই ক্রয়কৃত মাংস আসলে সুস্থ কোনো গরুর মাংস কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। প্রতিদিনই শহরের মাংস দোকানগুলোতে অসুস্থ-রোগাক্রান্ত গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। আমি কয়েকদিন আগে দৌলতপুর বাজার হতে এক কেজি মাংস কিনি। প্রেসার কুকারে ৩০টির উপর বাশি দেওয়া সত্ব্ওে সিদ্ধ হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে কোনো অসুস্থ বয়স্ক গরুর মাংস হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনরে জন্য কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেস্তুুরেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, আমার রেস্তুুরেন্টে ৭/৮জন কর্মচারী কাজ করে। তাদের তিন বেলা খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় আমাকে। সপ্তাহে ২/১ গরুর মাংস থাকে। দুঃখের বিষয় দৌলতপুর বাজার হতে মাংস কিনলে আরা রেহাই মেলে না। রান্না করতে করতে গ্যাস শেষ হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হলেও মাংস সিদ্ধ হয় না। অনেক সাধারণ মানুষ আছে, বহু কষ্টে অর্জিত টাকা দিয়ে দু’এক কেজি মাংস ক্রয় করে। মাংস কিনে তারা প্রতিনিয়ত প্রতারণা শিকার হচ্ছেন। একাধীক ব্যক্তিবর্গের অসুস্থ, রোগাক্রান্ত, বয়স্ক গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষের নিরবতা এই অসাধু ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনা করতে আরো অনুপ্রাণিত করে তুলছে। তারা রাতারাতি আঙ্গুর ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
মাংস বিক্রেতা রুবেল জানান, আমরা সিটি কর্পোরেশনের সকল নিয়ম মেনে ব্যবসা করি। তারা প্রতিদিন অনুমোদন (সিল) দেওয়ার পরই মাংস বিক্রি করি। আমরা কোনো অসুস্থ, রোগাক্রান্ত, বয়স্ক গরুর মাংস বিক্রি করি না। কাস্টমারের যতটুকু মাংসের চাহিদা থাকে ঠিক ততটুকু মাংস সরবরাহ করি ও বিক্রি করি।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর বাজার বণিক সমিতির সাঃ সম্পাদক নান্নু মোড়ল জানান, কেসিসির ভেটেরিনারি শাখা হতে প্রেরিত একটি চিঠি পেয়েছি। ওই চিঠিতে দৌলতপুর গরু-মহিষ মাংস বিক্রেতাদের নির্দেশনা মেনে ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। আমরা মাংস ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে ওই নির্দেশনা মেনে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ জানাব। এরপরও যদি কোনো ব্যবসায়ী ওই নির্দেশনার বাইরে ব্যবসা পরিচালনা করে তবে তার দ্বায়ভার তাদের নিজেদের। নিয়মবর্হিভূত ব্যবসা পরিচালনা করলে সংশ্লিস্টরা আইনুসারে ব্যবস্থা নিবেন এটা স্বাভাবিক ।
এ ব্যাপারে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সাঃ সম্পাদক এড কুদরত- ই খুদা জানান, খাদ্য ভেজাল এটা মানবিক, জঘন্য ও দ-নীয় অপরাধ। ভেটেরিনারি ডাক্তারের উপস্থিতিতে প্রতিটি গরু-মহিষ জবাই করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তা হয় না। দাবি জানাচ্ছি, ভেটেরিনারি ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে নির্ধারিত স্থানে গরু-মহিষ জবাই সম্পন্ন করার। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে যারা অসুস্থ, রোগাক্রান্ত, মরা গরু জবাই করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাংস বিক্রি করে থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অন দ্যা স্পট জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করা। সরেজমিনে তাদের শণাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে পারলে এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে বিশ^াস করি।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আতাহার আলী জানান, কিভাবে একজন ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের কাছে অসুস্থ, রোগাক্রান্ত গবাদী পশুর মাংস ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে এটা আমার প্রশ্ন? আমাদের মানষিকতা কোথায় নিমেছে, আমরা কতটা বিবেকহীন হয়ে পড়েছি এটাও আমার প্রশ্ন। দৌলতপুর বাজারে গরু-মহিষের মাংস বিক্রির বিষয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমি ইতোপূর্বে বাজারের নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের সাথে বসে নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা জন্য অনুরোধ করেছি। কয়েক মাস পূর্বে পচাঁ মাংস বিক্রির অভিযোগ এক মাংস বিক্রেতাকে আটক করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করি। কেসিসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে থানায় একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। নিয়মবর্হিভূত ভাবে গরু-মহিষের মাংসের ব্যবসা পরিচালনার ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এ ব্যাপারে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ড. পেরু গোপাল বিশ^াস জানান, নগরবাসীকে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ মাংস সরবরাহ নিশ্চিতে খুলনা সিটি কর্র্পোরেশনের ভেটেরিনারি শাখার কর্তৃক অফিসিলায় এক আদেশে উল্লেখিত নির্দেশনা অনুসারে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই নির্দেশনার বাইরে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ব্যবসা পরিচালনা করলে ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের মাংস বিক্রির প্রিমিসেস লাইসেন্স বাতিলসহ আইনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি জানান এ কর্মকর্তা।