মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম
মাঝখানে একটু কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবার বাড়তে শুরু করেছে, বিশেষ করে চাল, সবজি, ডিম, মুরগিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের দাম। ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির সূচকে এখনো বিশ্বব্যাংকের লাল বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের জুন থেকে গত জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ সোয়া ৪ বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায় অবস্থান করছে। আলোচ্য সময়ে প্রতি মাসে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের উপরে থাকছে। প্রকৃতপক্ষে একই সময়ে প্রতি মাসে গড়ে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বনি¤œ ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। উল্লেখ্য, খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির সূচকে ৫ শতাংশের নিচে নামলেই লাল তালিকা থেকে বের হতে পারবে বাংলাদেশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে সূচকের লাল তালিকা থেকে বের হওয়ার বিষয়টি মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্যই কেবল নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থেও জরুরি। কারণ যেসব দেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে লাল ও পিঙ্গল বর্ণের তালিকায় থাকে, সেসব দেশের মুদ্রার মান স্থিতিশীল নয় বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে ওইসব দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের আগে অর্থনীতির সূচকগুলোর ক্ষেত্রে ডলারের প্রবাহ, দাম ও মূল্যস্ফীতির হার পর্যালোচনা করে। প্রশ্ন হলো, বৈশ্বিক মন্দা কাটার পর অধিকাংশ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও বাংলাদেশ কেন পারছে না? চালসহ অনেক পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশের বাজারে তা কমছে না, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ছে। এতে বোঝা যায়, দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমানোর পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। এর কারণগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমার প্রভাব দেশে না পড়ার মূল কারণ কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব। যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন হয়, ভরা মৌসুমে সেসব পণ্যের বাজারেও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এ থেকে এটা স্পষ্ট, দেশের বাজারব্যবস্থায় এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিত্যপণ্যের মূল্যে শৃঙ্খলা আনতে হবে। উৎপাদন পর্যায় থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছানোর মাঝে অনেক ধাপ আছে; যেমন-ব্যাপারি, ফড়িয়া, আড়তদার। সরকারকে খুঁজে দেখতে হবে সমস্যা কোথায়। কারা কারসাজি করছে। সেখানেই হাত দিতে হবে। মূল জায়গায় ব্যবস্থা না নিয়ে আর যা-ই করা হোক না কেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। বাজার স্থিতিশীল করতে সঠিক ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।