স্থানীয় সংবাদ

আশাশুনির মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন

নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসাসহ ১০-১২টি স্থাপনা

আশাশুনি প্রতিনিধি ঃ
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের তেতুলিয়া এলাকায় মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৬/৮ পোল্ডারের তেতুলিয়া এলাকায় প্রায় ১২০ মিটার এলাকার বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। খবর পেয়ে পাউবো কর্মকর্তারা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙনরোধে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল থেকে সেখানে জিও রোল এবং জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনে ইতিমধ্যে তেতুলিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ কওমিয়া ও হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার একটি কক্ষ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় স্থানীয় চর জামে মসজিদ ও তেতুলিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ কওমিয়া ও হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসাসহ অন্তত ১০/১২টি স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যাওয়ার শংকা তৈরী হয়েছে। ফলে ভাঙনকবলিত এলাকায় বসবাসকারি গ্রামবাসীর পাশপাশি গোটা এলাকাজুড়ে ভাঙন আতংক বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন মাস আগে তেতুলিয়া এলাকায় বড়িবাঁধে ধ্বস দেখা দিলে বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সংশ্লিষ্ট অংশসহ পাশাপাশি আরও দু’টি স্থানে বেড়িবাঁধে ধ্বস দেখা দেয়।
স্থানীয় গ্রামবাসী আব্দুল কাদের বলেন, নদী ভাঙনে তেতুলিয়া এলাকায় প্রায় দুইশ ফুট বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া পৃথক তিনটি অংশে আরও প্রায় দেড়শ ফুটের মতো বাঁধে ধ্বস লেগেছে। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মসজিদের পাশে ভাঙনরোধে ধসে যাওয়া অংশে বাঁশ পুঁতে এবং বাঁধের অবশিষ্ট অংশ জিও শিট দিয়ে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া বিলীন হওয়া বাঁধের পাশে অবস্থিত ভবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।

তেতুলিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুরের জোয়ারে আকস্মিকভাবে মসজিদ ভবনের পাশ হতে প্রায় ১০-১২ ফুট বেড়িবাঁধ মরিচ্চাপ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাতের জোয়ারে অবশিষ্ট বাঁধের আরও প্রায় সাত-আট ফুট একইভাবে নদীতে বিলীন হয়ে ভাঙন মসজিদের একেবারে কাছে পৌঁছে যায়। এতে করে আড়াআড়িভাবে প্রায় ১৮-২০ ফুট বাঁধ নদীতে বিলীন হলেও লম্বায় তা প্রায় দুইশ ফুটের বেশী হবে বলে দাবি করেন তিনি।

একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, দুপুরের জোয়ারে আরও ভাঙনের শংকা থেকে তারা শতাধিক বাঁশ কিনে আনেন। একপর্যায়ে পাউবোর কাউকে না পেয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিলীন হওয়া অংশে বাঁশ পুঁতে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটির সদস্যসহ এলাকাবাসী প্রায় তিন মাস আগে পাউবোর কর্মকর্তাদের সেখানকার বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছিল। বাঁধের ভাঙন ঠেকানোর পাশাপাশি মসজিদ মাদ্রসা ও এতিমখানাসহ আশপাশের স্থাপনাগুলো রক্ষার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তারা দেখবেন বলে জানালেও পরবর্তীতে একটি বারের জন্য পাউবোর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি সেখানে যেয়ে তাদের অভিযোগের খোঁজ-খবর নেয়নি।

ভাঙনমুখে থাকা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, এক বছর আগে মরিচ্চাপ নদী পুনঃখনন করা হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা পাউবোর কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে একটি ইট ভাটা মালিকসহ কয়েকজন বিত্তবান ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে যেয়ে ম্যাপ অনুসরণ করেনি। ইচ্ছাকৃতভাবে নদী পুনঃখনন কাজ পশ্চিম দিকে সরিয়ে দেয়ায় তারা একের পর এক ভাঙনের মুখে পড়ছেন। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তিন মাস আগে কাজ শুরু করলে এতগুলো স্থাপনা নদীতে বিলীনের শংকায় পড়তো না বলেও দাবি করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের দায়িত্বে থাকা সেকশান অফিসার (এসও) জহির বলেন, প্রায় ১২০ মিটার এলাকজুড়ে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুক্রবার সকালে ভাঙন পয়েন্টে জিও রোল ও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। শনিবার থেকে সেখানে বালু ভর্তি আরো জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের দায়িত্বশীল উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সরকারি জমির উপর অবৈধভাবে উক্ত স্থাপনাগুলো নির্মিত হয়েছিল। তাই অবৈধভাবে নির্মিত কোন স্থাপনা রক্ষার জন্য তাদের কোন বরাদ্দ থাকে না। ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষ কোন বরাদ্দ না দেয়ায় তিন মাস আগে অভিযোগ পেয়েও তারা কাজ করতে পারেনি।
পাউবো বিভাগ-২এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০টি জিও ব্যাগ স্থানীয়দের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বালুভর্তি করে জিও ব্যাগগুলো ধসে যাওয়া অংশে ফেলে মসজিদের ভাঙন রোধের চেষ্টা চালনোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে তারা নিজেদের উদ্যোগে কাজ শুরু করবেন বলেও তিনি দাবি করেন।
তবে তিন মাস আগে স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি দুই মাস আগে যোগদান করেছি।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় বলেন, বাঁধ বিলীন হওয়ার খবর পেয়ে তিনি বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে তাকে জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button