খুলনাঞ্চলের ৪ জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯৬,০২০ মেট্রিক টন

# চলতি অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র আওতায় খরিপ-১ মৌসুম
পাট উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ছে ‘খুলনাঞ্চলে’ #
# সর্বশেষ তথ্যনুসারে কর্তন শেষে পাটের উৎপাদন ৭৯,৮১৫ মেট্রিক টন #
# পাট চাষীরা ব্যস্ত এখন পাট কর্তন, জাঁগ, রোদে শুকানো এবং বাজারজাতকরণ প্রস্তুতি নিতে #
মো. আশিকুর রহমান ঃ পাট বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল, যা ‘সোনালী আঁশ’ নামে খ্যাত। বাংলাদেশের জলাবায়ূ ও মাটি পাট চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রথম সপ্তাহ হতে পাটের বপণ, যথা সময়ে পরিচর্যা, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, আগাছা দমনসহ গাছের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য পাতলা করণ, পোকার আক্রমন হলে যার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনসহ সার্বিক কার্যক্রম শেষে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে পাটের কর্তন শুরু হয়েছে খুলনাঞ্চল জুড়ে। খুলনাঞ্চলের পাট চাষীরা এখন তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত পাট কর্তন শেষে পাট জাঁগে রাখা, রোদে শুকানো এবং বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর পাট চাষের জন্য খুলনাঞ্চলে অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করেছে। বিগত বছরে কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে পাটের পরিচর্যা ও জাঁগ দেওয়া লাগলেও, চলতি বছরে খুলনাঞ্চলে পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ার দরুন কোনো কৃত্রিম সেচের প্রয়োজন হয়নি, খরচ কম হওয়ার দরুন কৃষকেরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি খুলনাঞ্চলে পাট উৎপাদনের গৃহিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই অঞ্চল সক্ষম হলে একদিকে যেমন পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে সেটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, খুলনাঞ্চলে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ- ১ মৌসুমে পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল। ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে চলতি বছরে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলায় (দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাট) খুলনা জেলায় ১ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৫৯৯ মেট্রিক টন, বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন, সাতক্ষীরা জেলায় ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন ও নড়াইল জেলায় ২৩ হাজার ৯০০ হক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে, সেনুসারে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলায় পাট উৎপাদনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ হাজার ২০ মেট্রিক টন।
বৃহস্পতিবার (২০ আগষ্ট) সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যনুসারে পাটের অর্জিত আবাদ ও উৎপাদনের হিসাবনুসারে খুলনা জেলায় ১ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৯৩ মেট্রিক টন, বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৯০৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন, সাতক্ষীরা জেলায় ১১ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন ও নড়াইল জেলায় ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৫৭ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন, ৪ জেলায় সর্বমোট উৎপাদন ৭৯ হাজার ৮১৫.৭ মেট্রিক টন পাট। এছাড়া অর্জিত পাটের আবাদে ৩৭ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমির পাট ইতোমধ্যে কর্তন করা হয়েছে, যার হার ৯৮.৩%।
নড়াইল কালিয়া উপজেলার জোকারচর গ্রামের কৃষক তৈয়েবুর কাজী জানান, ৫০ শতক জমিতে তোষা জাতের পাটের চাষ করেছি। প্রতি বছরই পাটের চাষাবাদ করি। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের চাষ কম করেছি। এপ্রিলের মাঝামাঝি পাটের চাষাবাদ শুরু করে ছিলাম। ইতোমধ্যে পাট কাটা শেষ করে জাঁগে রেখেছি। গত বছরের তুলনায় খরচ কম হয়েছে। কারণে এ বছর সেচ দেওয়া লাগেনি। প্রচুর বৃষ্টি ছিল এ বছর। ক্ষেতে এ বছর ২২/২৫ মণ পাট উৎপাদন হবে। দাম ভালো পাবো আশা করছি।
দিঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাট ইউনিয়নের কৃষক শাহবুদ্দিন জানান, এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ সম্পন্ন করেছি। পাটের বপণ শেষে এখন সঠিক পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ নিবিড় পরিচর্চা অব্যহত রেখেছি। বৃষ্টির পানির বিকল্প হিসাবে সেচের ক্ষেতে পানি দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস হতে সার্বিক বিষয়ে সহয়তা করে থাকেন।
কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, আমার সালামাবাদ ইউনিয়নে ধুসহাটি, বিল বাউচ, বলাডাঙ্গা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে ১৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে মাঝামাঝি পাটের চাষাবাদ শুরু এবং ইতোমধ্যে ওই আবাদকৃত পাটের কর্তন শতভাগ শেষ হয়েছে। কৃষকেরা এখন পাট কর্তন শেষে পাট জাঁগে রেখেছে এবং রোদে শুকাচ্ছে পাশাপাশি বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বছর পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ার দরুন কৃষকদের কৃত্রিম সেচ ব্যবহার করা লাগেনি। এ কারণে খরচ কম হওয়ার দরুন কৃষকেরা লাভবান হয়েছে এবং বাজারজাত করণে ভালো মূল্য পাচ্ছে।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কিশোর আহম্মেদ জানান, দিঘলিয়া উপজেলায় পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৫০ হেক্টর জমি। ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উপজেলায় (তোষা জাতের) পাটের অর্জিত আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ হেক্টর। ইতোমধ্যে পাটের শতভাগ কর্তন শেষ হয়েছে। কৃষকেরা ব্যস্ত পাট জাঁগ দেওয়া ও শুকানো নিয়ে। অনেকে পাট শুকানেরা পর বাজার জাতের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে অত্র উপজেলা হতে কৃষকদের সার্বক্ষনিক সহয়তা করা হয়েছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, ডুমুরিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদের টার্গেট ছিল ৭৯৬ হেক্টর জমিতে, ইতোমধ্যে শতভাগ অর্জিত হয়েছে। কৃষকেরা এখন পাট কর্তন শেষে জাঁক দিচ্ছে, অনেকে শুকাচ্ছে এবং অনেকেই বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে এই উপজেলা হতে কৃষকদের সার্বক্ষনিক সহয়তা করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মনির হোসেন জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৫০৮০ হেক্টর জমি। অর্জিত আবাদের অগ্রগতি শতভাগ। ইতোমধ্যে পাটের শতভাগ কর্তন প্রায় শেষে দিকে। দু’একটি ক্ষেতে কর্তন চলছে। উপজেলার কৃষকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন পাট জাঁক দেওয়া ও শুকানো নিয়ে। অনেকে পাট শুকানেরা পর বাজার জাতের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। আশা করি এই উপজেলা খুলনাঞ্চলে প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন পাট উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মৌসুমে ৩৯,৮৫৭ হেক্টর জমিতে ৯৬ হাজার ২০ মেট্রিক টন পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্জিত আবাদ ও উৎপাদনের অগ্রগতি ৩৮,২৬৮ হেক্টর জমিতে ৭৯, ৮১৫.৭ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়েছে। পাট কর্তনের হার ৯৮.৩%। এ বছর পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ার দরুন কৃত্রিম সেচের প্রয়োজন হয়নি, কৃষকদের খরচ কম হওয়ার দরুন তারা লাভবান হবে। খুলনাঞ্চলে পাট উৎপাদনের গৃহিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হলে একদিকে যেমন পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে সেটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।