হাসপাতালভিত্তিক জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন-আইন সংশোধনের বিকল্প নেই

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কেবল একটি প্রক্রিয়াগত কাজ নয়, বরং নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি এবং রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নের ভিত্তি। বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় লক্ষ্য অর্জনে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি-জন্ম নিবন্ধনের হার মাত্র ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধন মাত্র ৪৭ শতাংশ, যেখানে বৈশি^ক গড় যথাক্রমে ৭৭ ও ৭৪ শতাংশ। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ যথাযথ-জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনকে ব্যক্তির ওপর ছেড়ে না দিয়ে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে আইনগতভাবে দায়িত্ব দিতে হবে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর নিবন্ধনের আইনগত দায়িত্ব নেই। ফলে পরিবারকে নিবন্ধকের কাছে যেতে হয়, যা অনেক সময় বিলম্বিত হয় বা বাদ পড়ে যায়। এর ফলেই জাতীয় পর্যায়ের পরিসংখ্যান বিকৃত হয় এবং নাগরিকরা মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হন। জাতিসংঘ ঘোষিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (সিআরভিএস) দশক আমাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে। অনেক দেশ ইতোমধ্যে হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করে শতভাগ বা কাছাকাছি সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশও এ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। শুধু জনসচেতনতার ওপর নির্ভর না করে, আইন সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে এ দায়িত্ব দিতে হবে। প্রশ্ন হলো, কেন এখনো আইন সংশোধন হয়নি? ২০০৪ সালের আইন স্পষ্টভাবে যুগোপযোগী নয়। প্রযুক্তির অগ্রগতি, স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং ডিজিটাল রূপান্তরের যুগে কেবল পুরনো কাঠামোর ওপর নির্ভর করে শতভাগ নিবন্ধন সম্ভব নয়। এখন প্রয়োজন, নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে বাধ্যতামূলক করা এবং সেটিকে স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা। এই উদ্যোগ কেবল প্রশাসনিক কাজ সহজ করবে না; বরং নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত করবে, সঠিক পরিসংখ্যান সরবরাহ করবে এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি যোগাবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্যও এটি অপরিহার্য। বাংলাদেশ আর সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনকে ঐচ্ছিক থেকে বাধ্যতামূলক করতে হবে, এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব অর্পণ করে প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় ও স্বচ্ছ করতে হবে। ২০৩০ সালের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এখনই আইন সংশোধন ও কার্যকর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
