রংপুরে জ্বালানির সংকট: কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত

রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় জ্বালানির সংকট দিন দিন তীব্র আকার নিচ্ছে। যেখানে প্রতি মাসে আড়াই কোটি লিটার জ্বালানির চাহিদা, সেখানে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ৩০ লাখ লিটার। এই সরবরাহ ঘাটতির মূল কারণ রেলের ওয়াগন সংকট। একসময় তিনটি ডিপোতে নিয়মিত ২৪টি র্যাক জ্বালানি আসত, এখন তা নেমে এসেছে গড়ে ছয়টিতে। ফলাফল-পাম্পে জ্বালানির অপ্রতুলতা, পাম্প মালিকদের অতিরিক্ত খরচে দূর থেকে জ্বালানি সংগ্রহ, এবং সাধারণ জনগণের ভোগান্তি। এই সংকট শুধু পরিবহন খাতেই সীমাবদ্ধ নয়। রংপুরের কৃষি মূলত সেচনির্ভর। সামনে বোরো মৌসুমে জ্বালানির এ ঘাটতি দেখা দিলে কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ট্রাক্টর, পাম্প, মাড়াই যন্ত্র-সবকিছুর জন্য ডিজেলের চাহিদা বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে সেচ ব্যাহত হবে, উৎপাদন খরচ বাড়বে, আর তার সরাসরি প্রভাব পড়বে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর। পাম্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেল ওয়াগন না পাওয়ায় তাঁদের বিকল্প পথে জ্বালানি আনতে হচ্ছে, যেখানে পরিবহন ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ। এভাবে খরচ বেড়ে গেলে জ্বালানির দামও বেড়ে যেতে পারে, যার প্রভাব শিল্প ও পরিবহন খাতসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। অথচ ডিপো কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তেলের কোনো সংকট নেই; সংকট কেবল পরিবহনে। যদি বিষয়টি সত্যিই কেবল রেলের অভাব থেকে হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন জাগে-এই ঘাটতি পূরণের জন্য অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা কেন নেওয়া হচ্ছে না? প্রশাসনিক দিক থেকেও পরিস্থিতি হতাশাজনক। পাম্প মালিকদের পক্ষ থেকে একাধিকবার রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। এমন অবস্থায় দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নীরবতা কেবল সমস্যাকে জটিলতর করছে। জ্বালানি হলো অর্থনীতির প্রাণ। পরিবহন, কৃষি, শিল্প-সবখানেই এর ব্যবহার অপরিহার্য। রেল ওয়াগনের সংকট দীর্ঘমেয়াদে সমাধানযোগ্য বিষয় হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সড়কপথ বা পাইপলাইন পরিবহন ব্যবস্থার বিকল্প উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে রংপুর অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভয়াবহ আঘাত আসতে পারে।
