সরকারি ক্রয়ে নতুন বিধিমালা: স্বচ্ছতার পথে এক অগ্রগতি

সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে। সরকারি অর্থের বড় অংশ ব্যয় হয় ক্রয়ের মাধ্যমে, আর সেই খাতেই অনিয়ম, বিলম্ব ও দুর্নীতির অভিযোগ বারবার উঠেছে। এ বাস্তবতায় বিদ্যমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর)-২০০৮-এর জায়গায় প্রস্তাবিত পিপিআর-২০২৫ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। নতুন বিধিমালায় ৯৪টি সংশোধন, ১২টি নতুন বিধি ও চারটি নতুন তফসিল সংযোজন করা হয়েছে। সব সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা, ভেরিয়েশনের সীমা ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ, ভৌত সেবা ও শ্রমঘন সেবাকে আলাদা ক্যাটাগরিতে আনা এবং প্রতিযোগিতা বাড়াতে বিপরীত নিলামের সুযোগ সৃষ্টি-এসব পরিবর্তন ক্রয় প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়নের ইঙ্গিত দেয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা বা উপকারভোগী মালিকের নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা। এতে গোপন মালিকানা বা স্বার্থসংঘাতের সুযোগ কমবে। নারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা ইতিবাচক। একই সঙ্গে কালো তালিকাভুক্তকরণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে কঠোর করার উদ্যোগ জবাবদিহি বাড়াবে। তবে বাস্তবায়নই এখানে প্রধান চ্যালেঞ্জ। পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা বলছে, ভালো নীতিমালা থাকলেও তা প্রয়োগে শৈথিল্য থাকলে কাক্সিক্ষত সুফল আসে না। এখন প্রশ্ন হলো-এই সংস্কার বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে। ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা হলেও প্রযুক্তিগত দক্ষতা, আঞ্চলিক বৈষম্য ও সিস্টেমের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে, দর-কষাকষির সুযোগ বাড়ানো হলেও সেটি যেন অনৈতিক চাপ প্রয়োগ বা স্বজনপ্রীতির দরজা না খুলে দেয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা শুধু অর্থ সাশ্রয়ের বিষয় নয়, এটি সুশাসন ও জনগণের আস্থার প্রশ্ন। প্রস্তাবিত পিপিআর-২০২৫ যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও জবাবদিহির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তবে এর জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শক্তিশালী নজরদারি এবং সর্বোপরি দায়বদ্ধ প্রশাসনিক কাঠামো।
