সম্পাদকীয়

কাঁচা পাট রপ্তানি সংকটে: কৃষি, শ্রম ও বাণিজ্যের ঝুঁকি

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাতগুলোর মধ্যে পাট শিল্প অন্যতম। কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী-সব মিলিয়ে লাখো মানুষের জীবিকা এই খাতের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হঠাৎ করেই কাঁচা পাটকে শর্তযুক্ত রপ্তানি পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো পূর্বঘোষণা বা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই জারি হওয়া এই পরিপত্রের কারণে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাট রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে শ্রমিকরা কর্মহীন হওয়ার শঙ্কায়, ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে এবং কৃষকেরা পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন। পাট রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী কাঁচা পাট রপ্তানিতে এখন বিশেষ অনুমতি নিতে হবে, যা ইলিশ বা সুগন্ধি চাল রপ্তানির মতো জটিল প্রক্রিয়া তৈরি করবে। এতে একদিকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নিরুৎসাহিত হবে, অন্যদিকে বৈদেশিক বাজার স্থায়ীভাবে হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই বন্দরে ও পথে রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা বহু চালান আটকা পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে রপ্তানি আয়েও। সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক। মৌসুমের শুরুতেই যদি রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়ে, তাহলে কাঁচা পাটের দাম কমে যাবে। বাজারে চাহিদা কম থাকলে মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটই লাভবান হবে, অথচ কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। আর কারখানা ও গুদামে কাজ না থাকলে শ্রমিকেরা হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। প্রশ্ন হলো-কেন এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নেওয়া হলো? পাট খাতের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলো বলছে, এ পদক্ষেপে একটি গোষ্ঠী লাভবান হলেও গোটা খাত বিপর্যস্ত হবে। সরকারি সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও যুক্তি না থাকলে আস্থা হারায় উদ্যোক্তা ও শ্রমিকেরা, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক, কমে যায় রপ্তানি আয়-যা জাতীয় অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। সরকারি নীতিনির্ধারকদের এখনই স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে পরিপত্রটি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। রপ্তানি বাজার ধরে রাখা, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান রক্ষা করা-এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাট শিল্পের সঙ্কট শুধু একটি খাতের সমস্যা নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও কৃষি নির্ভর সমাজের জন্য অশনিসংকেত।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button