ভাঙনরোধে ব্যর্থতা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দায়

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমার নদের তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও ভাঙনরোধে কার্যকর ফল আসেনি। ২৩ কোটির বেশি টাকার দুটি প্রকল্পের মধ্যে একটি প্রকল্পে অর্ধেকেরও বেশি অংশ ভেঙে গেছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা গেছে, নির্ধারিত জিও ব্যাগের পরিবর্তে সিমেন্টের বস্তায় বালু ভরে পানিতে ফেলা হয়েছে, সিসি ব্লক বসানো হয়েছে দুর্বলভাবে। ফলে প্রকল্প শুরু হওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই তীর ভেঙে পড়েছে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, নকশা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে এবং ভাঙনের কারণ অনুসন্ধান চলছে।এ ধরনের অবস্থায় দুটি প্রশ্ন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথমত, যদি নকশা অনুযায়ী কাজ হয়, তবে কেন কয়েক মাসের মধ্যেই এত বড় অংশ ধসে গেল? দ্বিতীয়ত, যদি কাজের মান যথাযথ না হয়ে থাকে, তবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থার ভূমিকা কোথায়? প্রকল্পের অগ্রগতি দেখিয়ে বিল তোলার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হলে কেবল অর্থ অপচয়ই নয়, জনগণের আস্থাও নষ্ট হয়।স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের শুরু থেকেই তদারকি ছিল দুর্বল, ফলে কাজ হয়েছে দায়সারাভাবে। আর এর ফলে সরকারি অর্থের অপচয় যেমন হয়েছে, তেমনি নদীভাঙনের শিকার মানুষও থেকে গেছে অনিশ্চয়তার মুখে। নদীভাঙন উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনে-ভিটেমাটি হারানো থেকে শুরু করে জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।নদীভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণ জরুরি, তবে সেগুলো টেকসই হতে হবে। স্বল্পমেয়াদি, দুর্বল এবং নি¤œমানের কাজ কেবল অকার্যকর নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। এই ব্যর্থতার দায় নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নির্ধারণ করা এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। একইসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় মানুষ ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।নদীভাঙন ঠেকানো কেবল একটি প্রকৌশলগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। তাই এখানে অবহেলা ও অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রকল্প জনগণের কল্যাণে কার্যকর হতে হবে-এটাই প্রত্যাশা।