দেশের জন্য যেন বোঝা না হয়

এলডিসি থেকে উত্তরণ
বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরণ ঘটাতে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। জাতিসংঘের নির্ধারিত তিনটি সূচক- আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- সবগুলোতেই বাংলাদেশ সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই অর্জন যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে, তেমনি তৈরি করছে নতুন চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে রপ্তানি ও শিল্প খাতে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ থেকে জিএসপি সুবিধা পেয়ে এসেছে, যার ফলে তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া, নিটওয়্যারসহ বহু খাত রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছে। এই সুবিধা হারালে রপ্তানি ব্যয় বাড়বে, ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন—তাঁদের মতে, প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তৈরি পোশাক খাতের নেতারা সরাসরি জানিয়েছেন, তাঁরা এখনো প্রস্তুত নন এবং তিন বছরের সময় বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন। ওষুধশিল্পের প্রতিনিধিরা সতর্ক করেছেন, শুল্ক সুবিধা না থাকলে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে, যা দেশীয় বাজারে ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এই বাস্তবতায় প্রয়োজন একটি সুস্পষ্ট, সময়োপযোগী ও শিল্পভিত্তিক রোডম্যাপ। শুধু সরকারের একক উদ্যোগ যথেষ্ট নয়; ব্যবসায়ীদেরও নিজ নিজ খাত অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়ন, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে কার্যকর সংলাপ ছাড়া এই রূপান্তরকে সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এলডিসি থেকে উত্তরণ যেন দেশের জন্য বোঝা না হয়ে, বরং নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে- এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সময় খুব বেশি নেই, তাই এখনই প্রয়োজন সাহসী, দূরদর্শী ও সমন্বিত পদক্ষেপ।