স্থানীয় সংবাদ

খালিশপুরে দুর্বৃত্তের উপর্যুপরি অস্ত্রাঘাতে মারাতœক জখম যুবদল নেতা শংকামুক্ত

# ফেইজবুকে হামলাকারীদের নাম প্রকাশ নিয়ে তোলপাড় #
# মামলা রেকর্ড করা নিয়ে পুলিশের গড়িমশি #

স্টাফ রিপোর্টার ঃ দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুলনার খালিশপুর ১১নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক আহবায়ক মাসুদ হোসেন (৫০) গুরুতর জখম হয়েছেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা খালিশপুর নিউ মার্কেট রোডে তাকে কুপিয়ে জখম করে। ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবদল নেতা মাসুদ এখন শংকামুক্ত বলে পারিবারিক সূত্রে প্রকাশ। তবে ভিকটিমের ফেউজবুক পেইজে হামলাকারীদের নাম পরিচয় লিখে আপলোড করায় তা সবাই জানতে পেরেছে। এই নিয়ে এলাকায় দলের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে ভিকটিমের ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় অভিযোগ দাখিল করলেও তা রেকর্ড করা নিয়ে থানা পুলিশ গড়িমশি করছে। ভিকটিম খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মৃতঃ আব্দুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খালিশপুর থানা শ্রমিকদলের সভা নিউজপ্রিন্ট মিল গেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় যোগ দেন যুবদল নেতা মাসুদ। সভা শেষে তিনি মটর সাইকেল যোগে কোরবান আলী নামক এক যুবককে নিয়ে লাল হাসপাতাল মোড়স্থ নিজ বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে তিনি রাত সাড়ে ৯টার দিকে খালিশপুর নিউ মার্কেট ভিতরে গিয়ে থেমে যান। এ সময় তিনি মটর সাইকেলের পাশে কোরবানকে দাড়িয়ে রেখে কসাইখানার দিকে যান। হঠাৎ কোরবান দেখতে পায় দু’জন মুখোশধারী তাকে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় কোরবান সরে দাঁড়াতে গিয়ে পাশে পরে যান। তখন দুর্বৃত্তরা মটর সাইকেলটি লাথি মেরে ফেলে দেয়। তারা চলে গেলে কোরবান উঠে দেখেন পাশে অনেক লোক। তিনি গিয়ে দেখেন যুবদল নেতা মাসুদ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এ সময় সবাই তাকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মুখোশধারী সন্ত্রাসী তাকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। তবে নৃসংশভাবে কোপানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, খালিশপুর নিউ মার্কেট রোডে দুর্বৃত্তদের হামলায় মাসুদ নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় অভিযোগ দেয়া হলেও তা তদন্ত শেষে রেকর্ড করা হবে। তবে ঘটনার ভিডিও ফুটেজসহ প্রমাণাদি আছে। তারপরও নিরাপরাদ ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা দেয়া ঠিক নয়। সে জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। মামলা হবে তবে পরে আর আগে। মামলা না হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে তিনি জানান। এদিকে এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও মাদক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে এ হামলা হতে পারে বলে কেউ মনে করছে। উল্লেখ্য, নগরীর খালিশপুরে সাবু নামের এক দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীদের ধারালো অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়। এমন কি সে বাজার কমিটির সাবেক নেতা উজ্জলকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এ নেক্কারজনক কাজ করায় ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃবৃন্দ তাকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশে দিয়েছে। তবে একটি সূত্র জানায়, ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাজারে মহড়া দেয়া যুবক সাবু আহত যুবদল নেতা মাসুদের লোক। এছাড়া বাজার কমিটির নেতা উজ্জলের লোক হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী নজরুল-মন্ডল। বাজারের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে নজরুল-মন্ডল বাহিনীকে ব্যবহার করে মাসুদকে হত্যার চেষ্টা করা হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এই নজরুলের সাথে ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একটি অংশের ভাল যোগাযোগ রয়েছে। তারা ওয়ার্ডে একক আধিপত্য ধরে রাখতে বিএনপির অপর গ্রুপের যুব নেতা মাসুদকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে এ পরিকল্পনা হাতে নেয় বলে কেউ কেউ মনে করছেন। অন্য একটি সূত্র জানায়, আ’লীগ আমলে নাদিম হত্যা হয়। ওই নজরুল একাধিবার মাসুদকে মারার জন্য ধাওয়া করে। তারই ধারাবাহিকতার জের ধরে গত বছর ৬ আগস্ট টিএন্ডটি গেটে নজরুলকে দেখতে পায় মাসুদ। এ সময় তারা নজরুলকে ধাওয়া করে। এই নজরুল বাহিনীর হামলায় শিকার হয়ে বিগত দিনে পঙ্গু হয়েছে শিক্ষক সবুজ ও নজর। প্লাটিনাম মিল কলোনীর মধ্যে খুন হয় বাপ্পী নামের একজন স্কুল ছাত্র। তাকেও এরা কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় নজরুলের যাবজ্জীবন সাজা হয়। পরে সে আপিলে বের হয়ে আসে। নিউ মার্কেট বাজার কমিটির সাঃ সম্পাদক আল আমিন বলেন, পরপর দু’টি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে বাজারে ক্রেতা আসা কমে গেছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এদিকে রবিবার ভিকটিম মাসুদ তার ফেইজবুক পেইজে লিখিছেন,“আমাকে পরিকল্পিত হত্যার চেষ্টা করে গুটি বাবু (থানা যুবদলের সভাপতি প্রার্থী), আরিফ, নজরুল (হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী), মন্ডল, মাছ আলা উজ্জল, সজিব, কানা বেল্লাল, কাজল, বাগান বাড়ির উজ্জল, বিহারী সনু, ফারুখ, জয়, বিজয়। এই পরিকল্পিত হত্যাকারীদের বিচারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক।” তবে কাজল বলেন,“আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। গত কাউন্সিলর নির্বাচনে আমি ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। অল্প ভোটের ব্যবধানে আমাকে হারানো হয়। আমি পিপলস পাঁচতলার ভিতর একটি অফিস নেই। ৫ আগস্টের পর বাবু ও আরিফ এসে তার অফিসটা বিএনপির কার্যালয় বানাবে বলে ভাড়া দিতে বলে। তখন আমি রাজি হয়নি। পরে চাপাচাপিতে থানা বিএনপির সভাপতি এড. মোহাম্মদ আলী বাবুর কথামত এই অফিস বিএনপির নিকট ভাড়া দেই। কিন্তু এতে ক্ষুব্দ হয় ভিকটিম মাসুদ, স্বপনসহ তাদের গ্রুপের লোকজন। এছাড়া আমি গত ৫ আগস্টের পরপরই পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে আ’লীগ থেকে পদত্যাগ করি। একই সাথে বিএনপির সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করছি। এই অফিস ভাড়া দেয়া-না দেয়াকে কেন্দ্র করে আমাকে নেক্কারজনক ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” ভিকটিমের ভাই জাকির হোসেন বলেন, কোপানোর ঘটনায় খালিশপুর থানায় অভিযোগ দাখিল করা হলেও পুলিশ তা রেকর্ড করেনি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, গুটি বাবু নামের এক আসামীর নাম দেয়া নিয়ে পুলিশ আপত্তি করছে। অথচ তার নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে তিনি জানান। আরেক বিএনপি নেতা স্বপন বলেন, “কাজলের নাম আসার বিষয়টি যেভাবে বলা হচ্ছে সেভাবে নয়। আমি এবং মাসুদ তাকে একাধিকবার বলেছি, খারাপ মানুষদের সাথে না মিশতে। কাজল মেশার কারণে হয়তোবা তার নামটি আলোচনায় আসছে বলে তিনি মনে করেন। তবে মাসুদ যা করেছে তার সাথে আমি একমত। ” ভিকটিমের স্ত্রী টিনা বলেন, “ পঙ্গু হাসপাতালে আমার স্বামী চিকিৎসাধীন। অবস্থা তেমন ভাল নয়। জ্বর থেমে থেমে আসছে। সব মিলিয়ে মাসুদের শরীর ভাল নয়। আর মাসুদ যা ফেইজবুকে লিখে ছেড়েছে তা তিনিই করেছেন।” মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, “ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। বিষয়টি দলের হাইকমান্ড গুরুত্ব সহকারে দেখছে। তবে কোন নিরাপরাদ ব্যক্তি যাতে আসামী না হয় এবং কোন দোষী ব্যক্তি যাতে মামলা থেকে রেহাই না পায় সে দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।”

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button