সম্পাদকীয়

সড়ক নিরাপত্তা ও যানজট: ইশতেহারে চাই কার্যকর প্রতিশ্রুতি

১১ বছরে ৬২ হাজারের বেশি প্রাণহানি

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান এক ভয়াবহ বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমাদের। গত ১১ বছরে দেশে ৬২ হাজারেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৮৭ হাজার মানুষ, আহত হয়েছেন দেড় লাখেরও বেশি। এই সংখ্যাগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয়, এর পেছনে রয়েছে হাজারো পরিবারে শোক, অশ্রু ও দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক ক্ষত। সড়কে প্রতিদিন যে অগণিত প্রাণ ঝরে যাচ্ছে, তা একটি জাতির জন্য নিঃসন্দেহে গভীর বেদনা ও লজ্জার বিষয়। একই সঙ্গে যানজট এখন জাতীয় অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ^ব্যাংকের হিসাবে কেবল ঢাকাতেই প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। এর বাইরে জ্বালানি অপচয়ের কারণে আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি যুক্ত হচ্ছে। দীর্ঘ যানজটে আটকে থেকে মানুষের মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শ^াসকষ্ট ও পারিবারিক অশান্তির মতো সমস্যাও ক্রমেই বাড়ছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশও এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, সড়ক ও গণপরিবহন খাতের সংস্কার ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি রয়ে গেছে। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন যাত্রী ও নাগরিক সমাজের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত না করায় প্রত্যাশিত সুফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে। আধুনিক ও নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলের মতো ছোট যানবাহন প্রধান পরিবহনের বিকল্পে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে প্রাইভেট পরিবহনের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই বাস্তবতায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি যথার্থভাবেই বলেছে-আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও যানজট নিরসনের কার্যকর কৌশল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ সড়ক নিরাপত্তা শুধু পরিবহন খাতের উন্নয়ন নয়, বরং মানুষের প্রাণ রক্ষা, অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানো এবং সুস্থ সামাজিক জীবনের নিশ্চয়তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। নিরাপদ সড়ক ও যানজটমুক্ত নগর নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এখন প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক দলগুলো এই মৌলিক চাহিদাকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে তাদের অঙ্গীকারে স্থান দেবে এবং বাস্তবায়নের দৃঢ়তা দেখাবে। জনগণ আর কেবল আশ^াস শুনতে চায় না, তারা দেখতে চায় সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও তার কার্যকর প্রয়োগ। সময় এসেছে সড়ক নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনকে উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button