খুলনায় ইজিবাইক চালককে অচেতন করে ইজিবাইক ছিনতাই : ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি

# দুর্বত্তরা চালককে অজ্ঞান ও পায়ূ পথের উপরিভাগে জখম করে, মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা #
# দুর্বত্তরা হত্যার ভয় দেখিয়ে নগদের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় #
# আসামীদের বিরুদ্ধে রূপসা থানায় এজাহার, ইজিবাইক উদ্ধার ও আসামী গ্রেপ্তারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা #
স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা নগরীর লবণচরা থানাধীন রূপসা ব্রীজের নীচ থেকে মাহমুদুল হাসান সজিব (২৮) নামের এক ইজিবাইক চালককে চেতনা নাশক ওষুধের মাধ্যমে অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ভিকটিম নিজেই বাদী হয়ে রূপসা থানায় এক জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেছেন। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর ) বিকালে রূপসা ব্রীজের নীচে ওই ঘটনা ঘটে। শনিবার দুপুরের পর ওই চক্রের সদস্যরা ভিকটিম পরিবারের কাছে ইজিবাইক চালকের মুক্তিপণের জন্য এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই দিন বিকালে রূপসা কুদির বটতলা বাগান বাড়ীর রাস্তার পাশ থেকে স্থানীয়রা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে একটি স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার আগমুহুর্তে ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা তার খবর পেয়ে ওই হাসপাতালে পৌঁছে তাৎক্ষনিক ছাড়পত্রের মাধ্যমে ভিকটিমকে অজ্ঞান অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। বর্তমানে ভিকটিম খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভিকটিমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) জুম্মার নামাজের পর খাওয়া-দাওয়া শেষে প্রতিদিনের ন্যায় ইজিবাইক চালক সজিব দৌলতপুর থানাধীন দেয়ানা বাউন্ডারী রোড এলাকার ইজিবাইক গ্যারেজ হতে ইজিবাইক নিয়ে বের হন। ওই দিন রাত ১০ টা বেজে গেলেও তিনি বাড়ীতে না ফেরায় তার পরিবারের সদস্য দুঃচিন্তা ও উৎকন্ঠায় ভেঙে পড়েন। তারা তার সন্ধ্যানে নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে ও খুলনার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি অব্যহত রাখেন। অবশেষে ভিকটিমের সন্ধ্যান না পেয়ে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নিখোঁজের মা বাদী দৌলতপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রী করেন (যাহার নং-৫৮৯)। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর ইজিবাইক চালক নতুনরাস্তা মোড় এলাকায় পৌঁছালে সেখানে দুইজন যাত্রী তাকে বয়রা বাজার এলাকায় যাওয়ার জন্য ভাড়া ঠিক করে। যাত্রীরা ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন। বয়রা পৌঁছানোর ওই যাত্রীরা ইজিবাইক চালক সজিবকে পুনরায় খুলনার কয়েকটি স্থানে নিয়ে যায় এবং সবশেষে রূপসা ব্রীজের নিচে যাওয়ার জন্য বলে। সেখানে পৌঁছানোর পর একজন যাত্রী তাকে বলে এখনো আমাদের একটু কালেকশন আছে, তুমি দাঁড়াও। অপর যাত্রী তার সামনে এসে রোমাল নাড়ানাড়ি করে, অতঃপর ওই ইজিবাইক চালক অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ওই দিন বিকালে রূপসা কুদির বটতলা বাগান বাড়ীর রাস্তার পাশ থেকে স্থানীয়রা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে একটি স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই চক্রের সদস্যরা ভিকটিমের স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে ফোন করে তার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং মুক্তিপণের জন্য এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ভিকটিমকে বাঁচাতে তার পরিবারের সদস্যরা ওই চক্রের পাঠানো নগদ নম্বরে দশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। বাকি চাঁদার জন্য তারা ফোন দেওয়া অব্যহত রাখে। ওই দিন সন্ধ্যায় ভিকটিমের এক আতœীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ভিকটিমের উদ্ধার ও হাসপাতালে ভর্তির খবর পান। তাৎক্ষনিক ভিকটিমের স্বজনেরা রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছান এবং ছাড়পত্রের মাধ্যমে ভিকটিমকে অজ্ঞান অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। বর্তমানে ভিকটিম খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুর্বত্তরা ওই ইজিবাইক চালককে চেতনা নাশক ওষুধের মাধ্যমে অচেতন করে তার ইজিবাইকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় এবং ভিকটিমের পায়ূপথের উপরি অংশে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জখম করেন। পরিবারের ধারণে ভিকটিমের জ্ঞান আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে দুর্বত্তরা ওই জখমের ঘটনা ঘটিয়েছে।
ইজিবাইক চালকের খালু মো. আসলাম জানান, সজিব শুক্রবার দুপুরের পর ইজিবাইক নিয়ে বাহিরে বের হয়। রাত ১০ টা বেজে গেলেও সে বাড়ীতে না ফেরায় আমরা দুচিন্তায় পড়ি। সারা রাত নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে ও খুলনার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি অব্যহত রাখি। অবশেষে হারানো জিডি করি। শনিবার দুপুরে ওই চক্রের সদস্যরা আমাদের নিকট সজিবের মুক্তিপণের জন্য ১ লাখ টাকা চাদা দাবি করে। আমরা ভয়ে তাদের দেওয়া নগদ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ফেসবুকের মাধ্যমে সজিবের সন্ধ্যায় পায়, সে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছে। ওই মুহুর্তে সেখানে গিয়ে সজিবকে নিয়ে মুমুর্ষ অবস্থায় খুমেক হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। বর্তমানে সে খুমেক হাসপাতালের ভর্তি আছে। ছিনতাইকারীরা সজিবের পায়ূপথের উপরি অংশে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারাত্বক জখম করে এবং অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। প্রশাসনের নিকট এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
নিখোঁজ ডায়রী বাদী রিজিয়া পারভিন জানান, সজিব শুক্রবার দুপুরের পর ইজিবাইক নিয়ে বাহিরে বের হয়। রাত ১০ টা বেজে গেলেও সে বাড়ীতে না ফেরায়, আমরা নিকটতম আত্মীয়-স্বজন বাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করি। অবশেষে শনিবার সংশ্লিষ্ট থানায একটি হারানো জিডি করি। শনিবার একটি মোবাইল নম্বর থেকে ছেলের মুক্তিপনের দাবিতে আমার মেয়ে ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে মুক্তিপণের ১ লাখ টাকা চাদা দাবি করে তারা। আমরা ভয়ে তাদের দেওয়া নগদ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি ছেলে মুমুর্ষ অবস্থায় রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে। সেখান থেকে তাকে খুমেক হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। বর্তমানে সে খুমেক হাসপাতালের ভর্তি আছে। প্রশাসনের নিকট এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ইজিবাইক উদ্ধারসহ দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ভিকটিমের স্ত্রী জানান, শনিবার দুপুরের পর আমার ফোনে একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন করে আমার স্বামীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণের জন্য এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ভয়ে আমরা ওই নম্বরে দশ টাকা পাঠিয়ে দেয়। ভিকটিমকে উদ্ধার করা আনারুল্লাহ নামের ব্যক্তি জানান, শুক্রবার বিকালের একটু পর রূপসা কুদির বটতলা বাগান বাড়ীর রাস্তার পাশ থেকে এক ব্যক্তিকে স্থানীয়রা উদ্ধার । তখন কয়েকজন মিলে তাকে অচেতন অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।
এ বিষয়ে চিকিৎসাধীন ভিকটিম ইজিবাইক চালক সজিব জানান, শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) জুম্মার নামাজের পর খাওয়া-দাওয়া পর ইজিবাইক নিয়ে ভাড়ায় বের হয়। ওই দিন দুপুর ২ টার দিকে নতুনরাস্তা মোড় এলাকা হতে দুইজন যাত্রী আমি ইজিবাইকে বয়রায় যাওয়ার কথা বলে ওঠে। যাত্রীরা ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন। বয়রা পৌঁছানোর পর তার পুনরায় আমাকে রূপসা ব্রীজের নিচে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। সেখানে পৌছানোর পর একজন যাত্রী বলে এখনো আমাদের একটু কালেকশন আছে, তুমি দাড়াও। অপর যাত্রী আমার মুখের সামনে একটি রোমাল নাড়ানাড়ি করে। এরপর আর আমি কিছু জানিনা।
এ বিষয়ে খুলনার রূপসা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে সংশ্লিস্ট থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিব। এ সংক্রান্তে ভিকটিমকে সকল ধরণের সহযোগীতা করা হবে।