জাতীয় সংবাদ

বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল

১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে
ভাঙ্গার ২ ইউনিয়ন ফরিদপুর-৪ আসনে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে পৃথক রুল
ইসিতে ডিসি’র প্রতিবেদন

প্রবাহ রিপোর্ট : বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি আসন করে নির্বাচন কমিশনের গেজেট কেন অবৈধ হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। বাগেরহাটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেনসহ শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জেলা ট্রাক মালিক সমিতির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন রিট পিটিশন দাখিল করেন।
এছাড়া চিতলমারি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মুজিবর রহমান শামীম এর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আক্তার রসুল পৃথক দু’টি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন। আরও কয়েকটি রিট হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি।
উল্লেখ্য, গেল ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহাল রাখারদাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন বাগেরহাটবাসী।
এরপরও ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসনই জারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশনের এই আসন বিন্যাস গণ মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ ( বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা)ও বাগেরহাট-৩(কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।
দীর্ঘদিন থেকে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। তখনকার সীমানা: বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২(বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।
অপরদিকে, ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে আলগি এবং হামিরদি ইউনিয়ন দুটিকে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন (চরভদ্রাসন এবং সদরপুর উপজেলা) এবং ফরিদপুর-৫ সংসদীয় আসন (ভাঙ্গা উপজেলা) পুনর্বহাল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আগামী সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপির অঙ্গসংগঠন জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহ আলম রেজা, আইনজীবী এম ফাহাদ খান, ব্যবসায়ী এম এম শহিদুল ইসলাম শাহীন, চরভদ্রাসন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাজাহান শিকদারসহ সদরপুর এবং চরভদ্রাসনের ১৬ জন ভোটার এ রিট দায়ের করেন। পরে রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, ইতোপূর্বে নির্বাচন কমিশন আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেই প্রজ্ঞাপনে চরভদ্রাসন এবং সদরপুর তথা ভাঙ্গা উপজেলার একটি অংশকে নিয়ে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। একইসঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলা থেকে আলগি এবং হামিরদি ইউনিয়ন দুটিকে বিচ্ছিন্ন করে পার্শ্ববর্তী সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২-এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। তাই নির্বাচন কমিশনের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে রিটটি দায়ের করা হয়। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণী আইন ২০২১-এর ৭ ধারা এবং বাংলাদেশ সংবিধানের ১২৫(ক) অনুচ্ছেদ চ্যালেঞ্জ করা হয়। ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে সংশ্লিষ্ট আইন ভঙ্গ করে দুটি সংসদীয় আসন (ফরিদপুর-৪ এবং ফরিদপুর-৫) একত্রিত করে তিনটি উপজেলার সমন্বয়ে একটি আসনে (ফরিদপুর-৪) রূপান্তরিত করে। ইতোপূর্বে রিট আবেদনকারীরা পূর্বের ন্যায় ফরিদপুর-৪ এবং ফরিদপুর-৫ দুটি স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন পুনর্বহালের জন্য আবেদন করলে নির্বাচন কমিশন সেই আবেদন নামঞ্জুর করে এবং অবৈধভাবে ভাঙ্গা উপজেলা থেকে দুটি ইউনিয়ন পরিষদ বিচ্ছিন্ন করে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করে। যা ২০২১ সালের সীমানা নির্ধারণী আইনের ৬ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, যেহেতু নির্বাচনি আইনে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকারের ক্ষেত্রে আইনি বাধা রয়েছে, সেহেতু সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণী আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা এবং সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কারণ একজন নাগরিককে আইনি প্রতিকার থেকে এবং সাংবিধানিক অধিকার থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করার সুযোগ নেই।
এদিকে, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পূর্বঘোষিত তৃতীয় দফার তিন দিনের কর্মসূচির শেষ দিনে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে অন্যদিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের চাপ কম রয়েছে। পাশাপাশি সহিংসতাকে কেন্দ্র করে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বরাবর প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার ছিল দিন। এদিন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদি ইউনিয়নের পুখুরিয়া ও হামিরদি এলাকায় কিছু সময় অবরোধ করলেও পরক্ষণেই তুলে নেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কোথাও অবরোধের ঘটনা ঘটেনি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মহাসড়কের হামিরদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায়, বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। পরে নিজেদের সমঝোতায় সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ তুলে নেন। তবে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ সময় স্থানীয়রা নতুন করে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান। দুই ইউনিয়নের পুনর্বহালের দাবিসহ দাবিগুলো তুলে ধরে স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম খান বলেন, আলগী চেয়ারম্যানকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে, দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, রাতের বেলায় প্রশাসন দিয়ে হয়রানি করা যাবে না এবং নতুন করে মামলা দেওয়া যাবে না। এসব শর্ত না মানলে আন্দোলন চলবেই। এ ছাড়া বেলা ১১টা থেকে সবাই একযোগে কর্মসূচিতে যাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর-সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। সেখানে অবস্থান করেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। অপরদিকে সহিংসতার পর গত সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক জানান, ইউনিয়ন দুটি পুনর্বিবেচনাকরণে রাতেই নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুতে তিনি উল্লেখ করেন, ফরিদপুর-২ এবং ফরিদপুর-৪-এর সংসদীয় সীমানা পুনর্র্নিধারণ করা হয়। উক্ত তালিকায় ফরিদপুর-৪-এর অন্তর্গত ২টি ইউনিয়ন, আলগী ও হামিরদী জাতীয় সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ফলে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুটি ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ উক্ত আসন বিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। সর্বশেষ গত সোমবার বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এর প্রেক্ষিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবির সমর্থনে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সংসদীয় আসন পুনর্র্নিধারণের বিষয়ে জনগণ মেনে নিতে পারেনি। উক্ত দুটি আসনের সর্বস্তরের জনগণ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মর্মে জানা যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা না হলে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন দুটি পুনর্বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button