ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে: উন্নয়নের সড়ক নাকি মৃত্যুফাঁদ?

১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। প্রশস্ত লেন, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস ও সার্ভিস রোডসহ সব ধরনের অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এই এক্সপ্রেসওয়ে ক্রমেই দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি শ্রীনগরের ষোলঘর এলাকায় দ্রুতগতির প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে তিনজনের মৃত্যু আবারও সেই ভয়াবহ বাস্তবতাকে সামনে এনেছে। শুধু মে-আগস্ট মাসের হিসাবই দেখায়, এ সড়কে একের পর এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫২ জন মানুষের। সমস্যার মূলে রয়েছে নির্ধারিত গতিসীমা না মানা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো। প্রশস্ত সড়ক চালকদের জন্য গতির প্রতিযোগিতা তৈরির ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা না থাকা, পুলিশের নজরদারির ঘাটতি এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে। মামলা দায়ের হলেও কঠোর শাস্তি না হওয়ায় চালকদের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। ফলে আইন অমান্যের প্রবণতা যেন দিন দিন আরো বেড়েই চলেছে। এখন জরুরি হয়ে পড়েছে কয়েকটি বিষয়। এক্সপ্রেসওয়েতে কার্যকর গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পুলিশের হাতেকলমে জরিমানা কিংবা মামলা যথেষ্ট নয়; উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর অটো মেশিন ও ক্যামেরার মাধ্যমে আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও যাত্রী ও চালক উভয়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। সচেতন যাত্রী হলে বেপরোয়া চালককে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় দায়ী চালক ও গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়েটি আমাদের জন্য গর্বের, কিন্তু মানুষের প্রাণহানি অব্যাহত থাকলে সেই গর্ব ব্যথায় পরিণত হবে। উন্নয়নের সড়ক যদি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়, তবে সেই উন্নয়ন কোনো অর্থ বহন করে না। এখনই সময়-আইন, প্রযুক্তি, প্রশাসন ও সচেতনতার সমন্বয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েকে নিরাপদ সড়কে রূপান্তর করার। নইলে প্রাণহানির মিছিল দীর্ঘতরই হবে।
