অবৈধ সিসা কারখানা-স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ঘাতক

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুরের করেরগাঁও এলাকায় বন্ধের পরও আবার সচল হয়েছে একাধিক অবৈধ সিসা কারখানা। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়া ও প্রশাসনের একাংশকে ম্যানেজ করেই এসব কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। অথচ এর কালো ধোঁয়া ও এসিডের দুর্গন্ধে অন্তত ১০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। সরাসরি দেখা গেছে, শ্রমিকরা পুরনো ব্যাটারি ভেঙে সিসা গলাচ্ছেন। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে এই বিপজ্জনক প্রক্রিয়া। ফলে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো এলাকা। ইতিমধ্যেই বিলের পানি দূষিত হয়ে মাছ মারা যাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ^াসকষ্ট, চোখ জ্বলা, চর্মরোগসহ নানা অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। অনেকে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দুঃখজনক হলো, গণমাধ্যমে বারবার প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও প্রশাসনের অভিযান কেবল লোক-দেখানো পর্যায়েই সীমিত থাকে। কয়েকটি কারখানাকে জরিমানা করার পর আবারও স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। এতে বোঝা যায়, আইন প্রয়োগ ও নজরদারিতে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। অসাধু উদ্যোক্তারা প্রভাবশালী মহল ও কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়ম ভেঙেই কারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে শ্রমিকরাও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন। ন্যূনতম সুরক্ষা ছাড়া রাতভর সিসা গলানোর কাজ করতে গিয়ে তাঁরা শ^াসকষ্ট ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সিসা শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি, লিভার ও ¯œায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশও ব্যাহত হয়। কৃষিবিদরা বলছেন, সিসা মাটিতে পড়লে দীর্ঘমেয়াদে ফসলও বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। অবৈধ সিসা কারখানা শুধু পরিবেশ ও স্বাস্থ্য নয়, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের দায়সারা অভিযান পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। শুধু জরিমানা নয়, এসব কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন, যাতে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজে জড়াতে না হয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষের জীবন ও পরিবেশের বিনিময়ে অবৈধ কারখানা চালানোর কোনো যুক্তি নেই। প্রশাসনের দায়িত্ব হলো-আইন কার্যকর করা এবং জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা করা। করেরগাঁওয়ের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটিই এখন সময়ের দাবি।
