সম্পাদকীয়

কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক ও প্রশাসনিক সমন্বয় অপরিহার্য

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিশোর অপরাধের বিস্তার উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও গাজীপুরে অন্তত ৩০টি, কুমিল্লায় ২০টি, কক্সবাজারে শতাধিক, চট্টগ্রামের নানা এলাকায়, রাজশাহীর ৩০টি ওয়ার্ডে, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহে অসংখ্য চক্র সক্রিয়-এমন চিত্র আমাদের সামাজিক কাঠামোর ভেতরের গভীর সমস্যাকে উন্মোচন করে। এসব চক্রের কার্যক্রম কেবল ছিনতাই, চাঁদাবাজি বা দখলদারিতেই সীমাবদ্ধ নয়; রয়েছে খুন, মাদক ব্যবসা, নারীদের হয়রানি, এমনকি প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার মতো অপরাধ। অনেক ক্ষেত্রেই তারা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে থেকে যাচ্ছে, আবার কোথাও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা কিশোরদের সম্পৃক্ততা সমস্যাটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে, যা স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। পুলিশ কোথাও কোথাও তালিকা প্রণয়ন ও অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অভিযান শেষে অনেক সময়ই এই চক্রগুলো পুনরায় সক্রিয় হয়ে পড়ে। শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়-এটি সামাজিক ও পারিবারিক ব্যর্থতারও প্রতিফলন। অনেক কিশোর স্কুল ছেড়ে বস্তিতে বা রাস্তায় বড় হচ্ছে, কেউ টমটম চালিয়ে দিন কাটাচ্ছে, কেউ কোচিং সেন্টারের আশেপাশে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়া কিশোর অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। এজন্য অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আড্ডা নিষিদ্ধকরণ, নিয়মিত কাউন্সেলিং, এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে কিশোরদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো জরুরি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের স্বার্থে কিশোরদের ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করতে হবে। কিশোর অপরাধ একটি বহুমাত্রিক সংকট-এটি আইন-শৃঙ্খলা, সামাজিক নৈতিকতা, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। আজ যারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, কাল তারা সমাজে আরও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন প্রশাসনিক কঠোরতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের সমন্বিত প্রয়াস। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অপরাধের অন্ধকার গলিপথ থেকে ফিরিয়ে আনাই হতে হবে জাতীয় অঙ্গীকার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button