সম্পাদকীয়

স্বর্ণ পাচার: সীমান্ত সুরক্ষায় চাই কার্যকর কৌশল

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত, বিশেষ করে খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা অঞ্চল এখন স্বর্ণ পাচারের প্রধান রুটে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান উদ্বেগ বাড়ানোর মতো। দৈনিক প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, শুধু যশোর সীমান্ত থেকেই গত নয় মাসে প্রায় ১৯ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে বিজিবি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এ ধরনের অপরাধকে সাধারণ চোরাচালান ভেবে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, পাচারকৃত স্বর্ণ বিনিময়ে দেশে প্রবেশ করছে মাদক ও নানা নিষিদ্ধ দ্রব্য, যা কেবল অর্থনীতির ক্ষতি করছে না, বরং আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি পাচার ধরা পড়া মানে এর বাইরে আরও অন্তত পাঁচটি অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রকৃত চিত্রটি অনেক ভয়াবহ। পাচারচক্রের ধরনও বহুমাত্রিক। দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বিমানে স্বর্ণ ঢাকায় আসে, পরে বাস বা ট্রেনে খুলনা হয়ে যশোরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বেনাপোল, শার্শা, চৌগাছা, ঝিকরগাছা ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে পাশর্^বর্তী দেশে পাচার করা হয়। বিজিবি যদিও নিয়মিত অভিযান চালিয়ে বাহকদের ধরছে, মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে বারবার। ফলে বাহকরা সাজা পেলেও আসল অপরাধীরা অদৃশ্য থেকে যাচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব প্রচেষ্টা অনেকটাই ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় কী করা যেতে পারে? স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে যুক্ত নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করা জরুরি। বিমানবন্দর থেকে সীমান্ত পর্যন্ত গোটা সরবরাহ চেইন ভেঙে দিতে হবে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। শুধু মানবশক্তির ওপর নির্ভর করে অপরাধ দমন সম্ভব নয়; উন্নত স্ক্যানার, ড্রোন ও ইন্টেলিজেন্স শেয়ারের মাধ্যমে সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনা দরকার। মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ঘাটতি পাচারকারীদের সাহস যোগায়। তাই তদন্ত ও প্রসিকিউশন শক্তিশালী করাই এখন সময়ের দাবি। সবচেয়ে বড় কথা, স্বর্ণ পাচারকে আলাদা ঘটনা হিসেবে দেখা যাবে না। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত, যার মাধ্যমে মাদক, অস্ত্রসহ নানা অবৈধ বাণিজ্যও সক্রিয় থাকে। ফলে এ সমস্যা মোকাবিলায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কাস্টমস, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বিত কৌশল অপরিহার্য। সীমান্ত সুরক্ষা কেবল জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, এটি অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতারও প্রশ্ন। তাই স্বর্ণ পাচারকে রোধে এখনই কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি-না হলে দেশের সীমান্ত অঞ্চলগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের স্থায়ী ঘাঁটিতে পরিণত হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button