সম্পাদকীয়

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অবস্থা: অবহেলায় ভঙ্গুর সেবাখাত

যক্ষ্মা এখনো বাংলাদেশের অন্যতম স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, দেশে প্রতি বছর লাখো মানুষ নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। অথচ জেলায় জেলায় বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো কতটা কার্যকরভাবে কাজ করছে, তার চিত্র স্পষ্ট হলো পাবনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অবস্থায়। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতাল দীর্ঘ ৬৩ বছরে একটিবারও যুগোপযোগী সংস্কার পায়নি। পুরোনো ভবন, জনবল সংকট, যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা এবং ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির অভাবে এখানে রোগীদের চিকিৎসাসেবা কার্যত বাধাগ্রস্ত। ২০ শয্যার এই হাসপাতালের রোগীর চাপ প্রতিদিন শতাধিক। কিন্তু অবস্থা এমন যে, একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট, একজন মেডিক্যাল অফিসার ও হাতে গোনা কয়েকজন নার্সের ওপর নির্ভর করে চলছে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্যাথলজির মৌলিক পরীক্ষাগুলো বন্ধ, এক্স-রে, ইসিজি বা আলট্রাসনোগ্রামের মতো অপরিহার্য পরীক্ষাগুলো করতে রোগীদের ছুটতে হয় বাইরে। এতে শুধু খরচ বাড়ে না, রোগ নির্ণয়ে সময়ক্ষেপণও ঘটে। যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে যেখানে দ্রুত সঠিক নির্ণয় জরুরি, সেখানে এ ধরনের দুরবস্থা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। হাসপাতালের পরিবেশও সমানভাবে হতাশাজনক। রোগীরা জানাচ্ছেন, ভেতরে ও বারান্দায় ঠাসাঠাসি করে থাকতে হয়, পরিচ্ছন্নতার অভাব প্রকট। সরকারি নথিতে হয়তো এটিকে বিশেষায়িত হাসপাতাল বলা হয়, কিন্তু বাস্তবে এর অবস্থা একটি সাধারণ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চেয়ে ভালো নয়। চিকিৎসকদের অভিযোগ, অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও জনবল নিয়োগ ছাড়া এ হাসপাতালে মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। একজন বিশেষজ্ঞ ও একজন মেডিক্যাল অফিসারের ওপর শতাধিক রোগীর চাপ অব্যাহত থাকলে চিকিৎসার মান তো কমবেই, বরং তা রোগীদের জীবনহানির কারণও হতে পারে। এমনকি যক্ষ্মা প্রতিরোধের জাতীয় কর্মসূচিও এভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রশ্ন হলো, এ অবহেলা কেন? যে রোগ এখনো জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি, সে রোগের চিকিৎসাকেন্দ্রকে যুগের পর যুগ অবহেলায় ফেলে রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার নামান্তর। শুধু পাবনা নয়, দেশের অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিশেষায়িত হাসপাতালের একই চিত্র। এক্ষেত্রে দ্রুত অবকাঠামো সংস্কার, আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে। যক্ষ্মা নির্মূলের জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করতে হলে জেলা পর্যায়ের এই হাসপাতালগুলোকে শক্তিশালী করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে নাগরিক জীবনের মান সরাসরি যুক্ত। তাই পাবনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে অবহেলা চলতে দেওয়া মানে জনগণের জীবন নিয়ে খেলায় মেতে থাকা। এখনই সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে-না হলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button