সড়ক নিরাপত্তা: অবহেলা নয়, এখনই কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োজন

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সড়ক দুর্ঘটনা এখন বিশ^ব্যাপী মৃত্যু ও দীর্ঘমেয়াদি পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশও এ সংকট থেকে মুক্ত নয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় প্রকাশিত সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে রোড ক্র্যাশে মৃত্যুর ৯৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী-পথচারী, মোটরসাইকেল ও সাইকেল চালক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি উদ্বেগজনক তথ্য: মাত্র ১ শতাংশ গাড়ি নির্ধারিত গতিসীমায় চলে। এ বাস্তবতা নগরবাসীর জন্য শুধু হতাশারই নয়, বরং সরাসরি জীবনঝুঁকির প্রতিচ্ছবি। ২০২৩ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। সংখ্যাটি হয়তো কাগজে-কলমে সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু প্রতিটি প্রাণের পেছনে রয়েছে একটি পরিবার, অগণিত স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। আরও বড় চিত্রে তাকালে দেখা যায়, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৮৬ জনেরও বেশি মানুষ এভাবে জীবনের অবসান ঘটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে জাতীয় সংকট। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তথ্য প্রমাণ বলছে, বাস্তবায়নে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় ও কালেক্টর রাস্তায় নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রমের হার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এ হার অর্ধেকেরও বেশি। আবার ছুটির দিনে গতিসীমা লঙ্ঘনের প্রবণতা বেড়ে যায়। এ থেকে স্পষ্ট যে, আইন থাকলেও তার প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। তদুপরি, পথচারীদের জন্য নিরাপদ অবকাঠামো ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম এখনও অপর্যাপ্ত। প্রশ্ন জাগে, এ অবস্থার পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব? এক্ষেত্রে গতিসীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। এছাড়াও পথচারীবান্ধব ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং, ওভারব্রিজসহ নিরাপদ অবকাঠামো সম্প্রসারণ প্রয়োজন। পাশাপাশি চালক ও যানবাহনের নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত মনিটরিংয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে। একইসঙ্গে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে ধারাবাহিক সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা দরকার। সবশেষে, সড়ক নিরাপত্তাকে কেবল ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব হিসেবে দেখা যাবে না। এটি সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব নয়-স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহন বিভাগ, নগর পরিকল্পনাবিদ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম-সবাইকে এ বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে। একটি মৃত্যুও আমাদের জন্য অনেক বেশি। সুতরাং এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে, সড়ক আমাদের প্রাণ কেড়ে নেওয়া অব্যাহত রাখবে। নিরাপদ সড়ক আর বিলাসিতা নয়, এটি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার।
