সম্পাদকীয়

মূল্যবৃদ্ধি, হতাশা ও সামাজিক সংকট: নীরব নীতিমালার সময় নেই

পিপিআরসির সাম্প্রতিক জরিপের চিত্র কঠোর: দেশবাসীর প্রায় ৭০ শতাংশই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখছেন; পরিবারভিত্তিক মানসিক চিত্রে প্রায় ২০ শতাংশ অর্থনৈতিক সংকটে আছেন। এই ক্ষুদ্র কিন্তু প্রগাঢ় মোচড় থেকেই বোঝা যায় যে অর্থনীতির ঘূর্ণিতে এখন কেবল আয়ের পরিমাণ নয়-আন্দোলন, বিশ^াস ও আত্মবিশ^াসও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মে মাসে আয়োজিত আট হাজার ৬৬৭ পরিবারের জরিপে উঠে এসেছে, বেকায়দা পরিবারের মধ্যে ৬৭ শতাংশই চিকিৎসাব্যয়ে, ২৭ শতাংশ ঋণ পরিশোধে পিষ্ট – অর্থাৎ মৌলিক চাহিদা পূরণে ঘাঁতগেরস্থ অবস্থা বিরাজ করছে। আরও উদ্বেগজনক হলো মানসিক প্রেক্ষাপট: নানা আর্থিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক উদ্বেগের কারণে প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা হারিয়েছেন। একই সময়ে সন্তানের শিক্ষা, কিশোর অপরাধ ও মাদকবিরোধী উদ্বেগ যথাক্রমে ৬৫, ৫৫ ও ৫৬ শতাংশ প্রাধান্য পেয়েছে। অর্থত, অর্থনৈতিক ঝঞ্ঝার সঙ্গে সামাজিক ভাঙনও জোড়া খাচ্ছে। দুর্নীতি ও হয়রানি-সংক্রান্ত চিত্রও কম খারাপ নয়-যদিও ঘুষের হার কমেছে বলে মনে করা হলেও, হয়রানির শিকাররা বলছেন ৭৪ শতাংশ ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া কাজ হয় না। এটি শুধু আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়; নাগরিকদের ন্যায্য সেবা পাওয়ার অধিকার সংকুচিত হওয়ার ইঙ্গিত। অবস্থার ওপর সমালোচনামূলক বক্তারা-প্রতিষ্ঠানের অপ্রাতিষ্ঠানিক পরিচালনা, গোষ্ঠীতন্ত্র ও সেবা ভঙ্গুরতার কথাই তাঁরা বলেন-এগুলো দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দাবি করে। সমাধান একাধিক স্তরে গ্রহণযোগ্য। মূল্যস্ফীতির প্রভাব নরম করতে লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে-প্রচলিত প্রণোদনার পাশাপাশি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারে নগদ সহায়তা, ভর্তুকি ও টার্গেটেড খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা ও শিক্ষার খরচ মোকাবিলার জন্য বিশেষ সহায়তা প্যাকেজ দরকার। এছাড়াও উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসার পুঁজির সংকট দূর করতে সহজ ঋণসুবিধা ও বিনিয়োগ উৎস বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে-এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ও অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। পাশাপাশি সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় ডিজিটালভাবে একক পয়েন্ট সার্ভিস, গ্রিভ্যান্স রেজিস্ট্রেশন ও দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে-এখানে কড়াকড়ি ও জবাবদিহি অপরিহার্য। সবচেয়ে জরুরি হলো তথ্যভিত্তিক নীতিমালা ও বার্ষিক জরিপ-কেন্দ্রিক মনিটরিং করে নীতি-সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে। মানুষের আশা ফিরিয়ে আনা সহজ কাজ নয়, কিন্তু দরকার সৎ নেতৃত্ব, দ্রুত ও লক্ষ্যমাত্রিক নীতি ও সামাজিক সহমর্মিতা। এখনই পদক্ষেপ না নিলে মূল্যবৃদ্ধি ও হতাশার এই হার আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নকে পিছনে টেনে আনবে-আর সময় নেই বিলম্ব করার।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button