সম্পাদকীয়

অপরাধ বাড়ছে কেন, প্রতিকার কোথায়?

সাম্প্রতিক পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে-দেশে হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, চুরি, ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতি-এই সাত ধরনের অপরাধ বেড়েছে। গত ১৩ মাসে এ ধরনের মামলার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১০০টির বেশি মামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায়, যার সংখ্যা এক মাসেই প্রায় দুই হাজার। অপরাধের এই উর্ধ্বগতি কেবল পরিসংখ্যান নয়; এটি সমাজের নৈতিক স্খলন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও দুর্বল আইনশৃঙ্খলার প্রতিফলন। হত্যাকা- থেকে চাঁদাবাজি, এমনকি মব সহিংসতার মতো ঘটনাও এখন নিয়মিত হয়ে উঠছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে। এতে জনমনে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, আর অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিহিংসার রাজনীতি ও দীর্ঘসূত্রিতার বিচারব্যবস্থা অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। যখন মানুষ দেখে অপরাধীর শাস্তি হয় না, তখন তারা আইনকে উপেক্ষা করার সাহস পায়। একই সঙ্গে মাদক ও চাঁদাবাজি প্রায় প্রতিটি অপরাধের পেছনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালালেও শুধু কঠোর আইন প্রয়োগ দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি অপরাধপ্রবণতা রোধে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। অন্যদিকে বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন জরুরি। মানুষ যখন দেখে অপরাধের বিচার দ্রুত ও নিশ্চিত হয়, তখন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমে আসে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় মব সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো-মানুষ বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য এক বিপজ্জনক সংকেত। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে সামাজিক অস্থিরতা আরও বাড়বে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অপরাধের ঝুঁকি বাড়তে পারে, যা রাজনৈতিক সহিংসতাকেও উসকে দেবে। তাই সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। আইন প্রয়োগ, বিচার নিশ্চিতকরণ, নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা-এই চারটি স্তম্ভকে ভিত্তি করে জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। অপরাধ বাড়ছে; তবে প্রতিকারমূলক উদ্যোগ এখনো দুর্বল। এই প্রবণতা রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, নইলে সমাজে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button