সম্পাদকীয়

রাতের আঁধারে সৈকত দখল-পর্যটন ও পরিবেশের চরম হুমকি

কক্সবাজারের সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে রাতের আঁধারে বালিয়াড়ি দখল করে দোকান বসানোর ঘটনা শুধু একাধিক স্থাপনার অবৈধ নির্মাণ নয়; তা দেশের অন্যতম রিসোর্স-প্রাকৃতিক সৈকত, পর্যটন ভাবমূর্তি ও স্থানীয় জীবিকাকে সরাসরি আঘাত করেছে। প্রকাশ্যেই দেখা যায় যে, শতাধিক দোকান বসিয়ে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে; পর্যটক ও স্থানীয়রা শেকলে পড়েছে; এবং ইসিএ ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও প্রশাসনিক ফাঁকফোকর অনির্দিষ্ট প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। সৈকত দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সমস্যা নতুন নয়। কিন্তু রাতের অন্ধকারে দ্রুত ও বহুল পরিমাণে দোকান বসিয়ে নেওয়া যে সম্ভব হয়েছে, তা পরিষ্কার নির্দেশ করে প্রশাসনিক তদারকি ও নীতি প্রয়োগে গাফিলতির। প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, স্থানীয়দের অভিযোগে যদি কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশ বা অনুমতি সত্যি থাকে, সেটি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ওপর পরিচালনাগত অনিরাপত্তার দিকটিও উন্মোচিত করে। সরকারি যোগ্যতার শূন্যতা ও স্বচ্ছতার অভাবই এমন অনৈতিক কর্মকা-কে পুষে তোলে। প্রভাব পড়বে শুধু সৌন্দর্যের ওপর না-পড়বে অর্থনীতির ওপরও। কক্সবাজার দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র; সৈকত-অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন হলে পর্যটক আগমন কমবে, স্থানীয় ব্যবসা-মালিক ও শ্রমিকের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে অপরিকল্পিত স্থাপনায় পরিবেশ দুষণ ও কেবিনগত ক্ষতিও গভীর-বালি-চের পরিবর্তন, সাগরতীর জীবনচক্রে ব্যাঘাত, জলজ জীবনের নাশ ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। সমাধান একাধিক দফায় কার্যকরি হওয়া দরকার। অবৈধ সব স্থাপনা তৎক্ষণাত উচ্ছেদ করতে হবে-সাময়িক অভিযানে নয়, স্থায়ীভাবে। এছাড়াও জেলা প্রশাসন, পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা ও ট্যুরিস্ট পুলিশ মিলে একটি স্বচ্ছ, সময়নির্ধারিত ও প্রকাশ্য তালিকা প্রকাশ করে অনুমতিপত্র যাচাই করতে হবে; অনুন্নত প্রক্রিয়ায় ইস্যু করা থাকা অনুমতিপত্র দ্রুত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য-কোনো ধরনের রিহ্যাবিলিটেশন নয়, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রতিকার। দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োজন সমন্বিত উপকূল-ব্যবস্থাপনা নীতি: ইকো-ফ্রেন্ডলি জোন নির্ধারণ, দোকান ও অবকাঠামোর সীমা নির্ধারণ, স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং পর্যটন-বিকাশকে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। কক্সবাজারের মতো রতœ রক্ষা করতে হলে নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগে অনমনীয়তা থাকতে হবে। সৈকত আমাদের যৌথ সম্পদ-তার রক্ষা সরকারি দায়িত্ব এবং জনগণের আস্থার বিষয়। রাতের আঁধারে হলেও আলোর মতোই দ্রুত প্রতিকার না নিলে এই সম্পদের ক্ষতি বিপর্যয়কারী হবে। প্রশাসন যদি সময়োপযোগী, স্বচ্ছ ও শক্তসঙ্কল্পভাবে ব্যবস্থা নেয়, তবেই কক্সবাজার পুনরায় সবার জন্য নিরাপদ ও সৌন্দর্শ্যম-িত পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button