সম্পাদকীয়

থমকে যাচ্ছে অর্থনৈতিক অগ্রগতি

বেসরকারি খাতে স্থবিরতা

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত বেসরকারি খাত বর্তমানে এক গভীর স্থবিরতার মুখোমুখি। বিশেষ করে এই খাতে ঋণপ্রবাহে যে ধীরগতি ও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা-ের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি; বরং প্রবৃদ্ধির হার নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গেছে। এর আগে ২০২৫ সালের জানুয়ারি এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়েও একই ধরনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। অর্থাৎ, পাঁচ মাসের ব্যবধানে আবারও ঋণপ্রবাহে সংকোচন দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতির ফলে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাব, ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতা এবং নীতিগত অসঙ্গতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর ও বাস্তববর্জিত মুদ্রানীতি এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করছে। ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারির সময় থেকেই এই খাতে ঋণপ্রবাহে মন্দা শুরু হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে দুর্নীতি, লুটপাট এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ও পরিচালন দক্ষতা হ্রাস পায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, যা ঋণগ্রহণকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ফলে নতুন উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং রপ্তানিমুখী খাতগুলো প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পাচ্ছে না। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, ব্যাংক খাতের সংস্কার জরুরিÑ দুর্নীতি রোধ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে নমনীয়তা আনতে হবে, যাতে উৎপাদন ও বিনিয়োগে উৎসাহ সৃষ্টি হয়। তৃতীয়ত, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নীতিগত ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ বাড়ানো মানেই অর্থনীতিকে গতিশীল করা। তাই এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা ছাড়া বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button