সম্পাদকীয়

সুস্থ প্রজন্মের স্বার্থে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজন

বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ। আরও প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ভুগছেন ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসজনিত জটিলতা ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগে। শুধু চিকিৎসা ব্যয়ই ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, যার বোঝা বহন করতে গিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যে নিপতিত হচ্ছেন। এই পরিসংখ্যান কেবল স্বাস্থ্যঝুঁকিই নয়, অর্থনীতির ওপরও তামাকের ভয়াবহ প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃঢ় অবস্থান প্রশংসনীয়। সম্প্রতি ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যৌথভাবে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে যে ঘোষণা স্বাক্ষর করেছে, তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে ঘোষণার পাশাপাশি এখন জরুরি হলো-শক্তিশালী ও কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং দ্রুত বাস্তবায়ন। কিশোর-তরুণদের লক্ষ্য করে তামাক কোম্পানির বিপণন কৌশল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আইনের ফাঁকফোকর রোধ, বিজ্ঞাপন ও প্রমোশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ, ধূমপানমুক্ত জনস্থান নিশ্চিত করা এবং করনীতিকে আরও কঠোর করা অপরিহার্য। তামাকের ক্ষতি কেবল জনস্বাস্থ্যে সীমাবদ্ধ নয়; কৃষি ও পরিবেশও এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই তুলনায় রাজস্ব আয় সামান্য, অথচ এর সামাজিক ব্যয় বহুগুণ বেশি। তাই রাজস্ব নয়, জনস্বাস্থ্য ও সুস্থ প্রজন্মকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নকর্মীদের আহ্বান স্পষ্ট-তামাক কোম্পানির প্রভাব ও অপতৎপরতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে সব মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে। সুস্থ, সক্ষম ও উৎপাদনশীল প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে এখনই কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন নিশ্চিত করতে হবে। দেরি হলে কেবল ভবিষ্যৎ প্রজন্মই নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অর্থনীতিও চরম ঝুঁকিতে পড়বে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button