ঢাকায় ফ্লাট মণিরামপুরে তিনতলা আলিশান বাড়ি!

# ধণাঢ্য মুক্তিযোদ্ধার নামে বীর নিবাস প্রকল্পের বাড়ি বরাদ্দের অভিযোগ! #
মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ ঢাকায় অভিজাত এলাকায় ফ্লাট, মণিরামপুরে তিনতলা আলিশান বাড়ি রয়েছে মণিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব মোঃ আলাউদ্দিনের। তিনি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ননকমিশন অফিসার ছিলেন । তিনি প্রতিমাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও চাকুরির সুবাদে পেনশনও পেয়ে যাচ্ছেন। তার ছেলে একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে বসবাস করেন অষ্ট্রেলিয়ায়। তথাপিও ধণাঢ্য এই মুক্তিযোদ্ধার নামে অসচ্ছল হিসেবে বীর নিবাস প্রকল্পের বাড়ি বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায় একটি ফ্ল্যাটবাসা এবং মণিরামপুর পৌরশহরে নিজস্ব জমিতে একতলা বাড়ি রয়েছে যা সম্প্রসারিত করে তিনতলায় রুপান্তরিত করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে তিনি বর্তমান অবস্থা ও অর্থ সম্পদের প্রকৃত তথ্য গোপন করে নিজেকে একজন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে সরকারের কাছ থেকে ”বীর নীবাস” প্রকল্প থেকে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি নেয়ার জন্য তালিকাভূক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে রিতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে।
জানা যায়, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউদ্দিন ২০০৯ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। সেই থেকে টানা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত তিনি কামান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। গত ৩০ আগস্ট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নুতন করে সাত সাদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠান করা হয়। এ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পান আলাউদ্দিন। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে সরকার মণিরামপুরে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে পাঁচজনকে ”বীর নীবাস” প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে তদন্তের মাধ্যমে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে পাঁচজনের নামের একটি তালিকা চুড়ান্ত করে বাড়ি নির্মানের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ওই তালিকায় মোঃ আলাউদ্দিনের নাম রয়েছে চার নম্বর সিরিয়ালে। আর এ বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য ও এলাকায় রিতিমত হৈচৈ শুরু হয়েছে।
চুড়ান্ত তালিকায় আলাউদ্দিনের নামে বাড়িটি নির্মান করা হবে উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের তার পৈত্রিকভিটায়। অথচ তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য গোপন রাখা হয়েছে। মণিরামপুর পৌরশহরের সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিজস্ব জমিতে আলাউদ্দিনের রয়েছে প্রাচীর ঘেরা একটি একতলা বাড়ি। ইতিমধ্যে একতলা বাড়িটি সম্প্রসারন করে তিনতলায় রুপান্তরের কাজ এগিয়ে চলেছে। এছাড়া ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় তার রয়েছে একটি ফ্ল্যাট বাসা। ঢাকার ওই বাসায় মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী বসবাস করেন। মাঝেমধ্যে তিনি ঢাকা থেকে মণিরামপুরে এসে কাজকর্ম করে থাকেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে এখন একটি জাহাজের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। তিনি প্রতিমাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও চাকুরির পেনশন পেয়ে থাকেন। অথচ তাকে অস্বচ্ছল দেখিয়ে বীর নীবাস প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মান করে দেওয়ার চুড়ান্ত তালিকায় চার নম্বর সিরিয়ালে তার নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী জানান, আলাউদ্দিনের নামে বীর নিবাসের ঘর বরাদ্দের ব্যাপারে তিনি বিরোধীতা করেও টিকে থাকতে পারেননি। তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, তিনি আবেদনে প্রকৃত অবস্থা গোপন করে গ্রামের ঠিকানা উল্লেখ করেছেন। সে মোতাবেক গ্রামে গিয়ে তার পৈত্রিক ভিটায় কোন বাড়ি পাওয়া যায়নি। ফলে তার নাম অর্ন্তভূক্ত করার সুপরিশ করা হয়েছে।
বিষয়টি জানাজানির পর আলাউদ্দিনের পাশের গ্রাম ঝাঁপা এলাকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবদুল কাদের বিশ^াসের স্ত্রী লাইলি বেগম আক্ষেপ করে জানান, স্বামী মারা যাবার পর তিন সন্তানকে নিয়ে বসবাসের জন্য সাবেক কমান্ডার আলাউদ্দিনের কাছে আবেদন করেও তিনি একটি বাড়ি বরাদ্দ পাননি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন জানান, ঢাকা এবং মণিরামপুর পৌরশহরে তার বাড়ি থাকলেও মল্লিকপুর গ্রামের পৈত্রিকভিটায় কোন বাড়ি নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান, নিজেকে অস্বচ্ছল দাবি করে প্রকৃত তথ্য ও অবস্থান গোপন করে গ্রামের ঠিকানায় আবেদন করেছেন আলাউদ্দিন। তিনি প্রশ্ন করেন তদন্তটিম কিভাবে তার পক্ষে মতামত দিলেন ? এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।