স্থানীয় সংবাদ

সুন্দরবনে জেলেকে টেনে নিয়ে গেলো কুমির : ৭ ঘণ্টা পর লাশ উদ্ধার

# শতাধিক গ্রামবাসী, ও বন বিভাগের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি #
# দিনভর উদ্বেগ উৎকন্ঠা পার করে অবেশেষে লাশ মিললো #

আবু হানিফ, শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ঃ সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে কুমিরের আক্রমণে সুব্রত ম-ল (৩২) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল খালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ ও গ্রামবাসী। গতকাল বুধবার দুপুরে তার সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। নিহত সুব্রত খুলনার দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী এলাকার কুমুদ ম-লের ছেলে। পেশায় জেলে ছিলেন তিনি। বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশন থেকে সরকারি রাজস্ব দিয়ে পাস সংগ্রহ করে সুব্রতসহ কয়েকজন জেলে কাঁকড়া ধরতে বনে প্রবেশ করেন। আমুরবুনিয়া গ্রাম থেকে হেঁটে জোংড়া এলাকায় যান তারা। পথে নদী-খাল সাঁতরে পার হন। কাঁকড়া সংগ্রহ করে সুন্দরবন থেকে ফেরার পথে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে করমজল খাল সাঁতরে পার হওয়ার সময় একটি কুমির সুব্রতকে কামড়ে ধরে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে থাকা অন্য জেলেরা চেষ্টার পরও উদ্ধার করতে পারেননি তাকে। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা খালে তল্লাশি শুরু করেন। ঢাংমারী গ্রামের ইস্রাফিল বয়াতি জানিয়েছেন, সুব্রত সুন্দরবনে নদী-খালে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত মঙ্গলবার বিকালে তাকে কুমির নিয়ে গেছে এমন খবর জানার পর অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী নৌকা ও ট্রলার নিয়ে তার সন্ধানে সুন্দরবনের করমজল খালে তল্লাশি শুরু করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর করমজল খালের গজালমারী এলাকায় পানির নিচ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, করমজল খাল পার হওয়ার সময় কুমিরের আক্রমণে সুব্রত মারা গেছেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা বলে জানতে পেরেছি। খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাই। গ্রামবাসীর সঙ্গে তার সন্ধানে তল্লাশি শুরু করি। গত মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে খালে লাশ ভেসে উঠেছিল। পরে আবার কুমির মুখে নিয়ে ডুব দেয়। সাড়ে ৫টার দিকে আবারও কুমিরের মুখে লাশ দেখা যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কুমির লাশ ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণ দেখা গেলেও পরে তা আবার পানিতে ডুবে যায়। রাতে লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাংমারী গ্রামের শ্মশানে লাশের সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। বন কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, যেহেতু সুব্রত পাস নিয়ে বনে গিয়েছিল। কুমিরের আক্রমণে নিহত হওয়ায় তার পরিবারকে সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর একই করমজল খালে কুমিরের আক্রমণে প্রাণ হারান ঢাংমারীর ভোজনখালীর জেলে মোশাররফ হোসেন। তবে তখন নিষিদ্ধ সময় থাকায় এবং পাস না থাকায় তার পরিবার অনুদান পায়নি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button