সম্পাদকীয়

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পরিচর্যা দরকার

কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে দেশের ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের (এসএমই) অবদান সবচেয়ে বেশি। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এ খাত উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার একান্ত অপরিহার্য। যেকোনো দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত। বিশেষ করে কর্মসংস্থান তৈরিতে এ খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বিশ^ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাতটি বিশ^জুড়ে ৫০ শতাংশ মানুষের কর্মের জোগান দেয়। আবার প্রতিটি দেশের ব্যাবসা-বাণিজ্যের সিংহভাগ অংশীদার অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। বিশে^র প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যাবসা-বাণিজ্য এ খাতের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ দেশে শিল্প খাতে শ্রমশক্তির প্রায় ৮০ শতাংশই এসএমই খাতের। যার অর্থ, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল ভূমিকা পালন করে আসছে এ খাত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্ভাবনাময় এ খাতের বিকাশ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, কর্মসংস্থান বাড়ানো অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধিহীন জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে না। স্থবির কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গতি ফেরাতে হলে এসএমই খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এডিবির ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে কুটির শিল্পে প্রায় ৭৮ লাখ অতি ক্ষুদ্র (মাইক্রো), ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর মধ্যে জাপানের জিডিপির ৯০ শতাংশ এসএমই খাত থেকে আসে। চীনের মতো শীর্ষ অর্থনীতির জিডিপিতে ৭০-৭৫ শতাংশ ভূমিকা রাখে এ খাত। বৃহৎ অর্থনীতির বাইরে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও প্রায় ৬০ শতাংশ ভূমিকা রয়েছে এসএমই খাতের। এসব দেশের মতো আমাদের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান বাড়াতে, ২৫ শতাংশ থেকে উন্নীত করতে হলে বিশেষ নজর দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোগকে বিকশিত করতে হবে। বর্তমান সরকারকে এ বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। প্রয়োজনে বিদ্যমান নীতিমালার পুনঃসংস্করণ হোক। বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। টিকে থাকার জন্য তাদের আর্থিক সহায়তা, নীতিগত সুবিধা ও অবকাঠামোগত সহায়তা দিতে হবে। কারণ এ খাতই একসময় বৃহৎ শিল্পে রূপান্তর হয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button