অনলাইনে ফরম পূরণ করে ভারতে যেতে হবে : যাত্রীদের হয়রানি ও ভোগান্তির অভিযোগ

# ভারত ভ্রমণে নতুন নিয়ম #
ওহিদুল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধি ঃ এখন থেকে ভারত ভ্রমণের আগে অনলাইনে আগমন ফরম পূরণ করতে হবে। এমনিতে ভিসা জটিলতা আবার নতুন করে অনলাইনে ফরম পূরণ আরো একটি হয়রানি ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পাসপোর্টধারীরা।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) থেকে এ নিয়ম চালু করে ভারতীয় দূতাবাস। এখন থেকে ভারত ভ্রমণের সময় ইন্ডিয়ান ভিসা অনলাইন অ্যারাইভেল ওয়েব সাইডের আবেদন ফরমে পাসপোর্টধারীর সম্পর্কে চাওয়া তথ্য পূরণ করতে হবে। এদিকে একের পর এক নানান শর্তে পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত কমে নেমেছে ২০ শতাংশে। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনে এ পথে মাত্র তিন হাজার ৮৮২ জন পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করেছেন।
জানা যায়, সরকার পরিবর্তনে দেশে রাজনৈতিক অস্তিরতা বাড়লে নিরাপত্তা জনিত কারণ দেখিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারত সরকার ট্যুরিস্ট, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ করে দেয়। তবে মেডিকেল ভিসা চালু রাখলেও নানান শর্ত জুড়ে দিয়ে ভিসা প্রাপ্তি কঠিন করে দেয়। যে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া থাকবে তার কাছেই চিকিৎসা করাতে হবে। অনিয়ম করলে ফেরার সময় পাসপোর্টযাত্রীকে আটকে রাখছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন।
সর্বশেষ পহেলা অক্টোবর ভারতীয় দূতাবাস নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে ইন্ডিয়ার ভিসা অনলাইনের ওয়েব সাইডে আগমন ফরম পূরণ করে প্রিন্ট কপি সঙ্গে নিতে নির্দেশ দেয়। যেখানে পাসপোর্টধারীদের সমস্ত তথ্য এন্ট্রি থাকবে। তবে অনলাইনে তাদের সার্ভার সব সময় সচল না থাকায় নতুন করে দীর্ঘ সময় দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এর আগে পাসপোর্টধারীদের ভারত ইমিগ্রেশনে গিয়ে হাতে লিখে আগমন ফরম পূরণ করতে হতো। এছাড়া বেড়েছে ভ্রমণ খরচ। ভারতে যাবার আগেই একজন পাসপোর্টধারী ভারতীয় দূতাবাসকে ১৫০০ টাকা ভিসা ফি ও বাংলাদেশ সরকারকে ১০৫৭ টাকা ভ্রমণ ফি ও পোর্ট চার্জ পরিশোধ করতে হয়। যা গত বছরেও ছিল নির্ধারিত অর্থের অর্ধেক।
বন্দর সূত্র বলছে, ভিসা প্রদান সহজীকরণের কথা বলা হলেও শর্তের জালে তা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে চিকিৎসা, ব্যবসা, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টধারী যাতায়াত করতো। তবে নানান প্রতিবন্ধকতায় তা ২০ শতাংশে নেমেছে।পাসপোর্টধারী শ্যামল কুমার রায় জানান, স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন। নতুন করে ফরম পূরণ করতে ১০০ টাকা লেগেছে। সার্ভার সমস্যার কারণে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আর এক ভুক্তভোগী পাসপোর্টধারী অনিমেষ জানান, ভিসা পেতে তার ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ভোগান্তিরও শেষ নেই। হয় ভিসা সহজ করুক না হয় একেবারে বন্ধ করে দিক।ভারতগামী পাসপোর্টধারী আশানুর রহমান জানান, নানান শর্তে ভ্রমণ ও ভিসা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে যশোর থেকে ভিসা নিতাম। যশোরে ভিসা বন্ধ থাকায় এখন ভিসা নিতে দুইবার ঢাকা যেতে হচ্ছে। ভিসা ফি ডবল করেছে। অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তারপর আবার অনলাইনে আগাম তথ্য পূরন আর এক বিড়ম্বনা। এসব কারনে পাসপোর্টধারী যাতায়াত কমে এসেছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, ভিসা কমে আসায় পাসপোর্টধারী যাতায়াত কমে এসেছে। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনে এ পথে তিন হাজার ৮৮২ জন পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ভারতে গেছে ৭৯৬ জন এবং ভারত থেকে ফিরেছে ৪৮৬ জন, শুক্রবার ভারতে গেছে ৬০৯ জন এবং ভারত থেকে ফিরেছে ৫৮৬ জন। সর্বশেষ শনিবার ভারতে গেছে ৬০৬ জন এবং ভারত থেকে ফিরেছে ৭৯৯ জন পাসপোর্টযাত্রী।